ডেস্ক: বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি রৌশন আরা বেগমের মরদেহ কঙ্গো থেকে দেশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহসান জানান, টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আজ ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায় রৌশন আরার মরদেহ। মরদেহ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতার সময় রৌশন আরার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে এই অতিরিক্ত আইজির কফিন তার মহানগর প্রজেক্ট আবাসিক এলাকার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার স্বামী শফিকুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টরের দায়িত্বে থাকা রৌশন জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ ফ্রন্ট পুলিশ ইউনিটের মেডাল প্যারেডে যোগ দিতে কঙ্গোতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ফ্রন্ট পুলিশ ইউনিটের কমান্ডার (এসপি) ফারজানার গাড়িতে করে রোববার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। একটি লরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৫৭ বছর বয়সী রৌশন আরা।
পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, আজ সকাল ১০টায় মগবাজারের নয়াটোলা জামে মসজিদে, দুপুর ১২টায় মগবাজার ওয়্যারলেস জামে মসজিদে এবং জোহরের নামাজের পর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে রৌশন আরার জানাজা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবসহ রৌশন আরার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও বন্ধু-স্বজনরা জানাজায় অংশ নেবেন। পরে আজিমপুর কবরস্থানে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে দাফন করা হবে বলে জানান সোহেল রানা।
১৯৬২ সালের ১লা জানুয়ারি জন্ম নেয়া রৌশন আরা বেগম মগবাজারের টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করে ১৯৮৮ সালে তিনি যোগ দেন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে।
রৌশনই দেশের পুলিশ বিভাগের প্রথম নারী অফিসার, যিনি পুলিশ সুপারের দায়িত্বে জেলা পুলিশের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অতিরিক্ত আইজিপির পদে বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী অফিসার তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে পুলিশের হিসাবরক্ষণ বিভাগের সহকারী কমিশনার, রিজার্ভ অফিস, ট্রাফিক বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রশিক্ষণ ইউনিটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন রৌশন। কসোভোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ক্রাইম অ্যানালাইসিস অফিসার, সুদানে আনমিস-আনপোল শান্তিরক্ষা মিশনের চিফ অব স্টাফ হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনে কৃতিত্বের জন্য রৌশন আরা দুইবার আইজিপি ব্যাজ পান এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ অর্জন করেন। রৌশন আরা বেগম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস উইমেন্স নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সদস্য এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তার স্বামী মো. শফিকুল আলম চৌধুরী একজন ব্যবসায়ী। তাদের একমাত্র মেয়ে আর মুনাহা চৌধুরী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছেন।