মাসুদ পারভেজ, কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে :
গাজীপুরের কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে হিজাব পড়ে পরীক্ষা দেয়ার অপরাধে এক পর্দানশীল ছাত্রীর খাতা আধ ঘন্টা আটকে রাখেন দায়িত্বরত শিক্ষক পলাশ কান্তি বিশ্বাস। মুখ খোলা থাকা সত্বেও ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পলাশ কান্তি বিশ্বাস হিজাব পড়ার অপরাধে প্রায় আধ ঘন্টা আটকে রাখেন পরিক্ষার্থী সামিয়া জাহান সুপ্তার খাতা।
এ বিষয়ে সুপ্তার বড় ভাই সাদিউল হোসেন সোহাগ পরীক্ষা শেষে এর কারণ জানতে চাইলে ওই শিক্ষক পলাশ কান্তি তার সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলে জানা যায়। পরে সুপ্তার পিতা আব্দুস সালাম কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের নিকট এর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন।
সুপ্তার বড় ভাই সাদিউল হোসেন সোহাগ জানান, ২ মে বৃহস্পতিবার তার বোন সামিয়া জাহান সুপ্তা মুখ খোলা হিজাব পড়ে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ২০১ নং কক্ষে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তারাগঞ্জ এইচ এন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী সুপ্তা গতকাল পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্রের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল। বহু নির্বাচনি পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেয়ার সময় শিক্ষক পলাশ সুপ্তার খাতা কেড়ে নেন। এর কারণ জানতে চাইলে পলাশ কান্তি বলেন, হিজাব পড়ে এ কলেজে পরীক্ষা দেয়া যাবেনা। তিনি আরো বলেন, হিজাব পড়ে স্কুল কলেজে পড়ছ কেন ? মাদ্রাসায় গিয়ে ভর্তি হও। দীর্ঘ সময় সুপ্তা অনুনয় বিনয় ও কান্নাকাটি করেও খাতা ফেরত না পেয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে দায়িত্বরত অপর শিক্ষক পলাশকে খাতা ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানান।
এ সময় পলাশ তাকেও ধমক দিয়ে বলেন, আমার যখন মনে হয় তখন আমি খাতা ফেরত দিব, এ বিষয়ে আপনি কোনো কথা বলবেন না। পরে ওই শিক্ষকের পরামর্শে সুপ্তা চুপচাপ বসে থাকলে প্রায় আধ ঘন্টা পর তার খাতা ফেরত দেন পলাশ কান্তি বিশ্বাস।
সুপ্তার ভাই আরো জানান, এ ঘটনার কারণে সুপ্তা স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাই মেধাবী সুপ্তার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরী হয়েছে । যার প্রভাব পরবর্তী পরীক্ষা সমূহেও পড়তে পারে।
সুপ্তার পিতা আব্দুস সালাম ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সুপ্তা প্রথম থেকেই মুখ খোলা হিজাব পড়ে পরিক্ষা দিচ্ছে। এতোদিন কোন অসুবিধা হয়নি। এব্যাপারে পরিক্ষার হলে পূর্বে অবহিত করা হয়নি। কিন্তু পৌরনীতি পরিক্ষায় হিজাব নিয়ে খাতা আটকে রাখায় তার পরবর্তী পরিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষক পলাশ বলেন, ওই ছাত্রীর কানে কোনো ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে তার কানের উপর থেকে হিজাব সড়াতে পরপর তিনবার নির্দেশ দেই। কিন্তু সে হিজাব খুলতে অস্বীকার করায় তার খাতা নিয়ে আটক করি। কিছুক্ষণ পরে সে কানের উপর থেকে হিজাব সড়ালে তাকে খাতা ফিরিয়ে দেই। খাতা আটক করার কোনো বিধান আছে কিনা তাও তার জানা নেই বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ ছানাউল্লাহ্ বলেন, উপজেলঅ নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা’র নিকট থেকে বিষয়টি জেনে অভিযুক্ত শিক্ষক পলাশ কান্তিকে কলেজ অফিসে ডেকেছি। সবকিছু জেনে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলার জন্যে শিক্ষক পলাশকে বিকেলে আমার অফিসে ডেকে এনেছি। পলাশ ওই ছাত্রীকে কানের উপর থেকে হিজাব সড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তবে এ বিষয়ে ওই কক্ষে দায়িত্বরত অন্য শিক্ষকদের সাথে কথা বলে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পলাশ কান্তি বিশ^াস কলেজের শিক্ষার্থীদের তার নিকট প্রাইভেট ও নিজের লেখা গাইড বই পড়তে বাধ্য করেন। কলেজের আভ্যন্তরিণ পরিক্ষার হলে ছাত্রদের চাপ দিয়ে প্রাইভেট পড়ার টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে।