সুন্দরী গাছের মূলে ডায়াবেটিসের ‘ওষুধ’

লাইফস্টাইল

image_110888_0সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের মধ্যে মিলেছে সুগার সারানোর উপাদান। কালকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

২০১০ সাল থেকে এই গবেষণা শুরু হয়। ধাপে ধাপে গবেষণায় জানা যায়, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মধ্যে মূলত সন্দরী গাছের মূলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। সেগুলো আলাদাভাবে এবং বাজারচলতি কার্য়কর সুগারের ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মিলছে উল্লেখযোগ্য ফল।

চার বছর ধরে চলা এই গবেষণালব্ধ ফলাফল ইতিমধ্যেই ‘এপনো ফার্মাকোলজি’, ‘জার্নাল অব আয়ুর্বেদা’, ‘ফার্মানেট’, ফার্মাকোলজি সোসাইটির জার্নাল প্রভৃতি নামকরা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এই প্রকল্পের মুখ্য গবেষক ডা. অঞ্জন অধিকারি এই খবর জানিয়েছেন।

ডা. অধিকারি জানান,সুন্দরীর মূলে ‘ফ্ল্যাভোনয়েবস’নামে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থের সন্ধান মিলেছে। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং প্রাণী বা অ্যানিমেল মডেলে ব্যবহার করে দেখেছি-সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে সফল।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই উপদানটি সুগার স্বাভাবিক করে দেয়। কিন্তু স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় আরো কমিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার বিপদ ডেকে আনে না। আমাদের এবারের লক্ষ্য, উপাদনটিকে আরো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা এবং এটির পেটেন্ট নেয়া।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে ট্যাবলেট হিসাবে বাজারে আনার ব্যাপারে সরকার অধীনস্থ ওষুধ নির্মাতা বেঙ্গল কেমিকেল আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

আর জি কর মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন এলাকায় ২০০৯-১০ সালে অন্য একটি গবেষণা করতে গিয়ে এই গবেষণার সূত্রপাত। দেখা যায়,‘বাদাবন’-এর বহু মানুষ বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ বিশেষত সুন্দরী গাছের পাতা, মাটি ভেদ করে উঠে আসা শ্বাসমূল ও অন্যান্য অংশ খেয়ে থাকেন।

ওই এলাকার বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আরো দেখা যায়, ওই বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের মধ্যে বড়সড় মড়ক,জটিল অসুখে একসঙ্গে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। এই চমকপ্রদ তথ্য পাওয়ার পর ওই গাছ নিয়ে শুরু হয় গবেষণা।
দেখা যায়, শুধু বাইরে থেকে সুন্দরী গাছের মূলগুলি দেখতে অন্যরকম হওয়ার পাশাপাশি এর চরিত্রও বড় অদ্ভুত রকমের। মূলগুলির কোষের চরিত্র জোয়ার-বাটার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে। বাদাবনের নোনা পানি ছেঁকে মিষ্টি পানি গ্রহণ করার আল্লাহ প্রদত্ত্ব ক্ষমতাও রাখে গাছটি।

এরপর ইঁদুরকে এই মূলের অংশবিশেষ খাইয়ে মূল গবেষণা শুরু হয়। কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ করেন গবেষকরা। তা হলো- ১. এই মূলটি বিষাক্ত নয় তো, ২. এটি ব্যাথা কমানো বা ঘা সারাতে কাজে লাগে কি, ৩. ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এর ভূমিকা কী।

প্রথম দুটি সমস্যায় বিরাট কিছু সাড়া না মিললেও ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আশ্চর্য়রকমের ভালো সাড়া মেলে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের কাছে গবেষণাটি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি ও অর্থ সাহায্যের আবেদন করা হয়। রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর অর্থসাহায্যে সম্মত হয়।

ধাপে ধাপে গবেষণা করে দেখা যায়- ১. আলাদা করে এই মূল থেকে বার হওয়া উপাদান ব্যবহার করলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকছে। ২. মেটফরমিন, গ্লিবেনক্ল্যামাইড প্রভৃতি সুগারের কার্য়কর ওষুধের সঙ্গে মিছিয়ে ব্যবহার করে আরো ভালো ফল মিলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *