নানা বাড়ি নয়, না ফেরার দেশে জায়ান

Slider ফুলজান বিবির বাংলা লাইফস্টাইল


ঢাকা: বাবা-মায়ের আদরের ছোট্ট জায়ান তাদের ছেড়ে এখন অন্য জগতে। জীবনটাকে ভালো করে বোঝার আগে শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় তিন শতাধিক মানুষের সঙ্গে আট বছরের ছোট্ট জায়ান চৌধুরীও না ফেরার দেশে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে যখন চিরঘুমে শায়িত হয় জায়ান তার বাবা মশিউল হক চৌধুরী তখন শ্রীলঙ্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পিতার স্পর্শ ছাড়াই পুত্রের শেষ বিদায়। মর্মস্পর্শী আর বেদনার এমন যাত্রায় ছিল হাজারো মানুষের ঢল। জানাজার মাঠ থেকে বনানী কবরস্থান জায়ানের শেষবারের যাত্রায় সঙ্গী অশ্রুসজল শত শত চোখ। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ চোখের জলে বিদায় দিয়েছে জায়ানকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কাল রাতে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের শহীদ ১৮ সদস্যের কবরের পাশে জায়গা হয়েছে বৈশ্বিক সন্ত্রাসের শিকার জায়ানের।
৪৪ বছর পর এ যেন আরেক শহীদের বিদায়। এবার শুধু দেশ নয় পুরো পৃথিবীর সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এক ছোট্ট শিশুর পৃথিবীর কাছে রেখে যাওয়া শান্তির বার্তা।

গতকাল বাদ আসর বনানী ক্লাব মাঠে জায়ানের জানাজার নামাজ পড়ান বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাশেম। নিহতের নানা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি’র বক্তব্যে যেন শোক নেমে আসে পুরো মাঠে। সেখানে সবার উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, জায়ান চলে গেলেও তার প্রতি দেশি-বিদেশি মানুষের ভালোবাসা পরিবারকে আরো শক্তি দিয়ে গেল। চিকিৎসাধীন জায়ানের বাবা মশিউল হক চৌধুরীর সুস্থতার জন্যও এ সময় দোয়া চান শেখ সেলিম। জায়ানের মা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া যেন পুত্র হারানোর শোক সইতে পারে তার জন্য প্রার্থনার অনুরোধ করেন নানা। তিনি বলেন, জায়ানের দেড় বছরের একটা ছোট ভাই আছে। আপনারা তার জন্যও দোয়া করবেন। বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ছোট্ট শরীরটাকে আল্লাহ যেন জান্নাতে পৌঁছে দেন।

তার পরিবারকে যেন ব্যথা সইবার শক্তি দেন। আগামী শনিবার বিকালে বনানীর মাঠে কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান শেখ সেলিম। জানাজা শেষে কফিনে বন্দি সাদা কাফনে মোড়ানো জায়ানের মুখটুকু দেখবার সুযোগ হয় জানাজায় অংশ নেয়া জনতার। দেবতুল্য ছোট্ট শিশুর এমন বিদায় যেন কেউই মানতে পারেননি। কাছ থেকে দেখবার পর অশ্রু ঝরেছে দূরের-স্বল্প পরিচিত মানুষদেরও। বনানীর ক্লাব মাঠে জায়ানের জানাজায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্ববি মিয়া, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, ক?র্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, সা?বেক নৌপ?রিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ ফজ?লে নুর তাপস, আকবর খান পাঠান, মোস্তফা জালাল মহিউ?দ্দিন, ডা. এনামুর রহমান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন এবং ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। এর আগে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর দেড়টার দিকে জায়ানের মরদেহ তার নানা শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় আনা হয়। আদরের নাতির লাশ বুঝে নেন নানা শেখ সেলিম।

এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। জায়ান ছিল শেখ সেলিমের আদরের। বাবা-মায়ের সঙ্গে নানার বাসায়ই থাকত সে। রাজনৈতিক ব্যস্ততার মাঝেও নাতিকে সময় দিতেন নানা শেখ সেলিম। নানাকে দেখামাত্রই জায়ান জড়িয়ে ধরে চুমু খেত। সেই নাতির অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না শেখ সেলিম। পরে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জায়ানের মরদেহ দেখতে মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিক এবং আত্মীয়-স্বজনরাও ভিড় করেন। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। শেখ সেলিমের বাসায় জায়ানকে শেষবারের জন্য দেখতে আসেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জামেল হক, জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদসহ আরো অনেকে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান বলেন, এই বোমা হামলার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনা থেকে সকল দেশের পাশাপাশি আমাদেরও শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। এই ধরণের ঘটনা এড়াতে সকল ধরণের প্রস্তুতি থাকা উচিত আমাদের। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এই বিদায় অত্যন্ত মর্মান্তিক। এই বিদায় কাঁদায়। জায়ানের মৃত্যুতে পুরো জাতি আজ স্তব্ধ। জায়ানের আত্মার শান্তি কামনা করি।

আল্লাহর কাছে দোয়া করি তার বাবা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় জায়ান। বোমা হামলায় তার বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সও গুরুতর আহত হন। তাকে সেখানকার একটি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিল জায়ান। মা ও ছোট ভাই হোটেল কক্ষে অবস্থান করায় তারা বোমা হামলা থেকে বেঁচে যান। জায়ানকে নিয়ে নাস্তা করতে নিচে নেমে হামলার শিকার হন প্রিন্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *