লক্ষ্মীপুর: স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে গিয়ে লক্ষ্মীপুরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া তরুণী শাহেনুর আক্তার মারা গেছেন। আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত তরুনী শাহেনূর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সোনাগাজি গ্রামের জাফর আলমের মেয়ে।
এর আগে গতকাল বিকালে জেলার কমলনগর উপজেলার চরফলকনের আইয়ুবনগর এলাকার একটি সয়াবিন ক্ষেত থেকে দগ্ধ অবস্থায় তরুনীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে প্রথমে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মারা যান শাহেনুর আক্তার।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল (রোববার) রাতেই চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন ও একই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ আবু তাহের এবং অভিযুক্ত সালাউদ্দিনসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে, খবর পেয়ে সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন সদর হাসপাতালে ওই তরুণীকে দেখতে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, তরুনী নিজে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে না অন্য কেউ লাগিয়ে দিয়েছে কিনা, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন ও গ্রাম পুলিশসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
তবে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে শাহেনুর জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোনে সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। একপর্যায়ে প্রায় দেড় বছর আগে কাজী অফিসে তাদের বিয়ে হয়। প্রায় ৬ মাস আগে জানতে পারে সালাউদ্দিন বিবাহিত। এ কথা শুনে কিছুদিন আগেও কমলনগর আসেন তিনি। কিন্তু স্ত্রীর স্বীকৃতি পান নি। ফের শুক্রবার আবার লক্ষ্মীপুরে আসেন। কিন্তু এবারও স্ত্রী স্বীকৃতি দেয়নি। তিনি বলেন, স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়ায় আমার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় সালাউদ্দিন। অভিযুক্ত সালাউদ্দিন স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে গ্রামে বসবাস করেন। সালাউদ্দিন পেশায় রিকসা চালক। তার বাবার নাম মহর আলী।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৬ই এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনার ১৫ দিনের মাথায় স্ত্রী স্বীকৃতি চাওয়ায় লক্ষীপুরের কমলনগরে নৃশংস এই ঘটনা ঘটলো।