বাসস, ঢাকা: ব্রুনেই দারুসসালামের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে আজ রোববার ব্রুনেইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই সফরে বিভিন্ন খাতে দেশটির সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে পারে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট আজ সকাল সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে। বিমানটি স্থানীয় সময় আজ বেলা পৌনে তিনটায় ব্রুনেইয়ের রাজধানী বন্দরসেরি বেগাওয়ানের ব্রুনেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
ব্রুনেইয়ের যুবরাজ হাজি আল-মাহতাদি বিল্লাহ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাযোগে ইম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হবে। সফরকালে তিনি এই হোটেলে অবস্থান করবেন।
সফরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী হোটেলের বলরুমে ব্রুনেইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। একই দিন তিনি ব্রুনেইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন। পরদিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী ব্রুনেইয়ের সুলতান বলকিয়ার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নূরুল ইমানে চেরাদি লায়লা কেনচানায় সুলতান ও রাজকীয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইস্তানা নূরুল ইমানে বায়তুল মেশ্যুরায় সুলতানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ইম্পায়ার হোটেল অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে ব্রুনেই ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বৈঠকে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন এবং এই মসজিদে আসর নামাজ আদায় করবেন। শেখ হাসিনা সুলতান আয়োজিত তাঁর সরকারি বাসভবনে ভোজসভায় যোগ দেবেন।
মঙ্গলবার সকালে ব্রুনেইয়ের রাজধানীর জালান কেবাংসানের কূটনৈতিক জোনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। তিনি স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় ব্রুনেই থেকে যাত্রা করে সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতে ছয়টি এমওইউ চূড়ান্ত করেছি। বাকি একটি এমওইউ বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে ব্রুনেইয়ের বিনিয়োগ আশ্বাস পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।’
Eprothom Aloযেসব খাতে এমওইউ চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও জ্বালানি খাতের সহায়তা।
দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ সফর খুবই সফল হবে আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং জ্বালানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, খাদ্য, আকাশপথে যোগাযোগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করবে। ব্রুনেই ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিশেষত কৃষি ও জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ব্রুনেই। দেশটি ওআইসি ও আসিয়ানের সদস্য। সফরকালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে ব্রুনেইয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাচ্ছি, আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্রুনেই আসিয়ানের সদস্য হওয়ায় এই সফরেও বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পাবে।’