নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত ব্যবসায়ীকেও। বুধবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার ফকিরাপুল এলাকার একটি ভবন থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্যবসায়ী মনির হোসেন ব্যাপারীকে (৫২) ঢাকার রামপুরার মেরাদিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত মনির হোসেন ব্যাপারী হলো- কুমিল্লা দাউদকান্দি গাংকান্দা এলাকার মৃত নোয়াব আলী ব্যাপারীর ছেলে। তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শস্য (সরিষা, মরিচ, ডাল, ভুটা ইত্যাদী) কেনাবেচা করেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টায় সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকা থেকে রিকশায় মৌচাক এলাকায় ছোট ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছিল ব্যবসায়ী মনির হোসেন ব্যাপারী।
ওইসময় অপহরণকারীরা রাস্তায় রিকশার গতিরোধ করে স্প্রে (অজ্ঞান করার ওষুধ) ব্যবহার করে মনির হোসেনকে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে সেখান থেকে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় নিয়ে অপহরণকারীরা অজ্ঞান অবস্থায় মনির হোসেনকে নগ্ন করে নারীর সঙ্গে ছবি তোলে। মারধর করে পিঠে ও শারীরের বিভিন্ন জায়গায় আগুনের ছ্যাকা দিয়ে জ্বলসে দেওয়া হয়। পরে জ্ঞান ফিরলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। অন্যথায় হত্যাসহ নগ্ন অবস্থায় তোলা ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন। পরে মনির হোসেন দেড় লাখ টাকা দেওয়ার কথা বললে অপহরণকারীরা তাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। সেই আশ্বাসে মনির হোসেন ওই রাত ১২টায় নিজ মোবাইল থেকে ছেলেকে ফোন দিয়ে বলে, ‘অহরণকারীদের টাকা না দিলে মেরে ফেলবে। তাই টাকা ব্যবস্থা করে তাদের কথা অনুযায়ী পৌছে দিতে। ’ পরে তার ছেলে রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসে মনির হোসেন অপহরণের অভিযোগ দেয়।
তিনি আরো জানায়, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার সকালে ওসি নিজের নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যবসায়ী মনির হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত করে। পরে ৮ থেকে ১০ সদস্যের একটি পুলিশের দল খিলগাঁও এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালায়। এসময় অপহরণকারীরা মোবাইলে যোগাযোগ করে দাবিকৃত দেড় লাখ টাকা ফকিরাপুর এলাকার রোমা ফার্মিসিতে জামা দেওয়ার জন্য জানায়। পরে সাদা পোশাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ও ব্যবসায়ী মনির হোসেনের ম্যানেজারকে নিয়ে রোমা ফার্মিসিতে গেলে দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। পরে অপহরণকারীরা জানায় ফার্মিসির ভবনের তিনতলায় একটি ডাক্তারের চেম্বার আছে সেখানে ইসমাইলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। পরে তাদের কথা অনুযায়ী দেড় লাখ টাকা ইসমাইলের কাছে দেয়। অন্যদিকে অপহরণকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রামপুরার মেরাদিয়া এলাকা থেকে ব্যবসায়ী মনির হোসেনকে উদ্ধার করা হয়। পরে ডাক্তারের চেম্বারে টাকা নিতে আসলে সামসুল হক মিলনসহ ইসমাইলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া তামার বাজার এলাকার ইসমাইল (২৬)। সে ফকিরাপুল এলাকার বাসিন্দা ও রোমা ফার্মিসির বিক্রেতা। আরেক জন পাবনা ফরিদপুর বনাইনগর এলাকার মৃত মঈনুল হকের ছেলে সামসুল হক মিলন (৩৫)। সে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা।
ওসি বলেন, অপহরণের ঘটনায় আটক দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ চক্রের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।