সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে শনিবার ইরাবতিসহ কয়েক প্রজাতির ডলফিনের দেখা মিলেছে। ডলফিন সুন্দরবন ছেড়ে যায়নি। সেগুলো শ্যালা নদীর ভাটিতে দল বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
জেলেরা শ্যালা নদীতে ডলফিন দেখতে পাচ্ছেন বলে বনবিভাগের ডিএফও আমীর হোসাইন চৌধুরী শনিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন। শ্যালা নদী থেকে ভাসমান তেল অপসারণ ও উজানে বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলেও অভয়াশ্রমে ফিরে আসেনি ডলফিন।
সুন্দরবনে অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছে সুন্দরবন। পরিবেশবাদী ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন ঘুরে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের জয়মনি এলাকায় থেকে আন্ধারমানিক পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গাছের শ্বাসমূল, ঘাস ও লতাগুল্মে তেলের আস্তরণ পড়ায় হরিণের খাবারে কিছুটা সংকট দেখা দিচ্ছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, শ্যালা নদীর আশপাশের বনের অবস্থা সরেজমিন দেখতে রোববার জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এক প্রতিনিধি দল আসছেন। এরা ৪-৫ দিন সরেজমিন পরিদর্শন ও নানা বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
সুন্দরীগাছের শ্বাসমূল ও গাছের গোড়ায় লেগে থাক তেল পানি স্প্রে করে অপসারণের যে কর্মসূচি চালিয়ে সুন্দরবন বিভাগ যাচ্ছিল তা বন্ধ করা হয়েছে। পানি স্প্রে করে সাফল্য না পাওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। বন সংলগ্ন লোকালয়ের মানুষ, জেলে ও বনজীবীরা সনাতন পদ্ধতিতে গাছে লেগে থাকা ও ভাসমান তেল সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবারও ১৪০০ লিটার তেল সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে।
সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের শ্যালা নদীর ভাসমান তেলের কারণে জয়মনি থেকে ভাটিতে আন্ধারমানিক পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার বনভূমির গাছের শ্বাসমূলসহ জলাভূমিতে তেলের আস্তরণ লেগে থাকায় এখানকার গাছ ধীরে ধীরে মরতে শুরু করবে। এ বিশাল এলাকার ঘাসে তেলের আস্তরণ পড়ায় ঘাসগুলো মরে নতুন ঘাস না জন্মানো পর্যন্ত হরিণের খাদ্যের সংকট থাকবে। বনবিভাগের লোকজন তাকে জানিয়েছেন খাদ্যের অভাবে হরিণ অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার বনবিভাগের অফিস প্রাঙ্গণে এসে ভিড় করছে। তেলের কারণে সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।