নতুন ১২ মন্ত্রীর বাসা নেই, আগের ৮ মন্ত্রী বাসা ছাড়েননি

Slider বিচিত্র

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নেন গত ৭ জানুয়ারি। কিন্তু নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া ১২ জন মন্ত্রী নিজেদের নামে বরাদ্দ পাওয়া বাসায় এখনো উঠতে পারেননি। আবার বিগত সরকারের আটজন মন্ত্রী নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা না পেলেও আগেরবার মন্ত্রী হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া নিজ বাসা ছাড়েননি গত তিন মাসে। একইভাবে দশম সংসদের অনেক এমপি নানা অজুহাতে এখনো ছাড়েননি এমপি হোস্টেল।

এর মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া এমপিসহ সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপিরাও রয়েছেন। মনোনয়ন না পেলে আগেভাগেই বাসা ছেড়ে দেওয়াই রেওয়াজ। এ ছাড়া যারা নির্বাচিত হতে পারেননি, সরকারি বাসায় থাকার বৈধতাও তাদের নেই।
কিন্তু তারা বাসা ছাড়েননি। আবার ন্যাম ফ্ল্যাটে বরাদ্দকৃত বাসা ছাড়েননি এমন তালিকায় সাবেক মন্ত্রীরাও রয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েও মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত বাসা না পেয়েও অনেকে আছেন এমপি হোস্টেলে। এ ছাড়া মন্ত্রী হিসেবে বাসা পেয়েও কয়েকজন নিজেদের নামে এমপি হোস্টেলের ফ্ল্যাটও নিজ দখলে রেখেছেন। সংসদ কমিটি এর মধ্যে মিটিং করে সবাইকে দ্রুত ফ্ল্যাট খালি করে দেওয়ার জন্য পৃথকভাবে চিঠি ইস্যু করেছে। ঠিকমতো বাসা পাচ্ছেন না বলেই বাসা ছাড়তে দেরি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন সংসদ কমিটিকে।
এদিকে মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েও বরাদ্দপ্রাপ্ত বাসায় উঠতে পারেননি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

আবার মন্ত্রিসভায় জায়গা না পেলেও এখনো মন্ত্রী হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসভবনে বসবাস করছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মজিবুল হক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার।

এ ছাড়া সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত ৩ জানুয়ারি মারা গেলেও তার পরিবারের সদস্যরা বাসাটি খালি করে দেননি। এ ছাড়া বরাদ্দ দেওয়ার মতো বাসা না থাকায় ১৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে বাসা বরাদ্দ দিতে পারেনি সরকারের আবাসন পরিদফতর। ফলে এমপি হোস্টেল বা নিজ নিজ বাসা থেকে যাতায়াত করে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন এরা।

আবাসন পরিদফতর সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য মিন্টো রোড ও বেইলি রোডে ১৬টি সরকারি বাংলো ও ১৭টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। নতুন আরও ১০টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন আছে। তবে এসব অ্যাপার্টমেন্টের কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।

সংসদ সচিবালয়ের আবাসন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, মন্ত্রী হিসেবে নতুন বাসা না পাওয়ায় এখনো এমপি হিসেবে নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলে বরাদ্দকৃত বাসায় রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ২ নম্বর ভবনের একটি ফ্ল্যাটে আছেন তিনি। নাখালপাড়ার ২ নম্বর ভবনে থাকেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনও এমপি হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া আগের বাসায়ই থাকেন। নাখালপাড়ার এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ফ্ল্যাটে রয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এমন আরও কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী আগের বাসায়ই আছেন।

এ বিষয়ে সংসদ কমিটি ও আবাসন উপকমিটির সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম গতকাল বাংলাদেশে প্রতিদিনকে বলেছেন, দশম সংসদের অনেক এমপি এবারও এমপি হয়েছেন, অনেকে মন্ত্রিসভায়ও জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া সেসব বাসা খালি না হওয়ায় বা সংস্কার ইত্যাদি কারণে সেসব বাসায় উঠতে দেরি হচ্ছে। বাসা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত সময় চেয়েছেন তারা। নতুন বাসা পেলেই তারা এমপি হোস্টেল খালি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা। আবার নতুন বাসা পেতেও অনেকের সমস্যা হচ্ছে- এজন্য যারা মনোনয়ন পাননি তারা একটু সময় চেয়েছেন। এটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই।

সংসদ সচিবালয়ের এমপিদের আবাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, দশম সংসদে মানিক মিয়া এভিনিউতে ন্যাম ফ্ল্যাটের ছয়টি ভবন এবং নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলের চারটি ভবনে ৩৫০ জন এমপির মধ্যে ২৯২ জনকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিসভার বাইরে থাকা এমপিরা এসব বাসা বরাদ্দ পান। তবে অনেকে মন্ত্রী হওয়ার পরও এমপি হিসেবে বরাদ্দ ফ্ল্যাট ছাড়েননি। এমপিদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত সংসদবিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রথম বৈঠক গত ৭ ফেব্রুয়ারি কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দশম সংসদের এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ মন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া এমপিদেরও বাসা খালি করে দিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেন চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। এ ছাড়া পুরনো এমপিদের মধ্যে যারা এবার মনোনয়ন পাননি বা এমপি হতে পারেননি, তাদের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাসা খালি করে দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই এখনো তা খালি করে দেননি। তবে চিঠি পাওয়ার পর অনেকেই টেলিফোনে আরও কয়েক দিন সময় চেয়েছেন। তবে লিখিতভাবে কেউ কিছু বলেননি।

এ বিষয়ে চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাসা খালি করে দিতে আমরা চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে ছাড়ছেন। নতুন বাসা পেতে অনেকের সময় লাগছে। আশা করি অতি দ্রুত বাকি বাসাগুলো আমরা বুঝে পাব। ’

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭১টি সংসদীয় আসনে নতুন মুখ এসেছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে এখন পর্যন্ত নির্বাচিত ৪৯ জন মহিলা এমপির মধ্যে ৪৭ জনই নতুন মুখ। কিন্তু পুরনোদের মধ্যে যারা নতুনভাবে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাদের বাসা না ছাড়লেও চলবে। শুধু নতুনভাবে সেটি বরাদ্দ করিয়ে নিতে হবে। মানিক মিয়া এভিনিউর ৩ নম্বর ভবনে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দশম সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, রহিমা আক্তার, ফাতেমা জোহরা রানী এবং জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পাওয়া কুড়িগ্রাম-১ আসনের এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান এখনো সেখানে বসবাস করছেন। এ ছাড়া যারা ন্যাম ফ্ল্যাটের এমপি হোস্টেল ছাড়তে সময় চেয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গাজীপুর-৩ আসনের অ্যাডভোকেট রহমত আলী, জাতীয় পার্টির কুমিল্লা-৮ আসনের নুরুল ইসলাম মিলন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের রুহুল আমিন, নড়াইল-২ আসনের শেখ হাফিজুর রহমান, নাটোর-২ আসনের আবুল কালাম আজাদ, জাপার সংরক্ষিত আসনের নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী, এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, এস এম আবুল কালাম আজাদ, আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী, মো. আবদুর রহমান, বেগম হ্যাপী বড়াল, বেগম রিফাত আমিন, শাহানারা বেগম, সফুরা বেগম প্রমুখ। একাদশ সংসদে দলীয় মনোনয়ন পাননি পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল। কক্সবাজার-১ আসনের মো. ইলিয়াস, হবিগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় পার্টির আবদুল মুনিম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের এমপি মেরিনা রহমান, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের এমপি উম্মে রাজিয়া কাজল প্রমুখ।

সংসদ কমিটি সূত্রে জানা যায়, কমিটি যাদের ঢাকায় নিজেদের বাড়ি আছে, তাদের নতুনভাবে ফ্ল্যাট বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে আগে যদি কারও নামে বরাদ্দ থাকে তবে তা বাতিল করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *