ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় সতর্ক থাকুন

Slider তথ্যপ্রযুক্তি


নাসির খান: ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটায় সুবিধাই হয়েছে বেশি। বিভিন্ন উপলক্ষে ছাড় যেমন পাওয়া যায়, তেমনি নগদ টাকা সব সময় সাথে না রাখা কিংবা মাস শেষে একসঙ্গে বিল পরিশোধের সুবিধাও অনেকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ব্যবহারের কারণগুলো আলাদা হলেও সামগ্রিকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে অপরাধীদের নজরও এখন ক্রেডিট কার্ডের দিকে। এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। সতর্ক থাকলে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি বা এর মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।

https:// ছাড়া লেনদেন নয়
যেকোনো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেনদেন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, ওয়েবসাইটের ঠিকানার আগে সবুজ রঙে https:// লেখা আছে কি না। https:// লেখা না থাকলে সেই ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এমন কোনো ওয়েবসাইটে লেনদেন করা উচিত নয়।

কেবল পরিচিত ওয়েবসাইট থেকে

অনলাইনে কেবল পরিচিত ওয়েবসাইট থেকেই কেনাকাটা করা উচিত। বিশেষ করে ই–মেইল বা মেসেঞ্জারে পাওয়া নতুন কোনো ওয়েবসাইটের ঠিকানা বা লিংক না খুলে সরাসরি ব্রাউজার থেকে ওয়েবসাইটের ঠিকানা টাইপ করে সেটি খোলা উচিত। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া লিংক অনেক ক্ষেত্রেই ফিশিং (যে সাইটের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়) বা নকল ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারে, যেগুলো সাধারণত ওয়েবসাইটের তথ্য চুরির জন্য ব্যবহৃত হয়।

পাবলিক প্লেস থেকে অনলাইন কেনাকাটা নয়

সাইবার ক্যাফে, কম্পিউটার ল্যাব বা এমন কোনো কম্পিউটার থেকে কোনো ধরনের কেনাকাটা করা উচিত নয় যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ব্যবহার করে থাকে। এই সব কম্পিউটার কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হতে পারে। আবার তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার মতো ক্ষতিকর কোনো সফটওয়্যার আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকতে পারে।

একইভাবে শপিং সেন্টার বা উন্মুক্ত স্থানের বিনা মূল্যের ওয়াই–ফাই থেকেও একই ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই ধরনের স্থানে অনলাইন লেনদেন এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

হালনাগাদ সফটওয়্যার

ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সব সফটওয়্যারের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ ব্যবহার করা উচিত। পুরোনো সংস্করণের সফটওয়্যারের সীমাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারে রাখা তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির অপর একটি বড় মাধ্যম হলো চোরাই (পাইরেটেড) সফটওয়্যার ব্যবহার করা। তাই সফটওয়্যার হালনাগাদের পাশাপাশি সেটির যেন আসল লাইসেন্স থাকে তা খেয়াল রাখা জরুরি।

অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করা

কম্পিউটার ভাইরাস বা ক্ষতিকর প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারকারীর নানা ধরনের ক্ষতি করতে পারে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড কপি করে নেওয়া, ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার বহনকারী সফটওয়্যারগুলো ভুল ও ক্ষতিকর ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে কেনাকাটায় প্ররোচিত করা ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে নেওয়ার মতো কাজ করে থাকে।

বাজারে সুনাম রয়েছে এমন অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার নির্বাচন করা উচিত। অনলাইনে বিজ্ঞাপন বা ই–মেইল লিংকের মাধ্যমে পাওয়া কোনো অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত না।

টাকার পরিমাণ মিলিয়ে নেওয়া

যে পণ্য বা সেবার জন্য পরিশোধ করা প্রয়োজন, ঠিক সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্ক ঠিক আছে কি না তা মিলিয়ে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি টাকা পরিশোধ করার যে নিশ্চিতকরণ ই–মেইল এবং এসএমএস পেয়েছেন সেটির সঙ্গেও মূল্য পরিশোধের পরিমাণ একই আছে কি না তা দেখা উচিত। বর্তমানে দেশের প্রতিটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার তথ্য গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

একাধিকবার পাঞ্চ করা

পয়েন্ট অব সেল মেশিনের মাধ্যমে কখনো টাকা প্রদানের সময় নেটওয়ার্ক বা অন্যান্য সমস্যার কারণে যদি লেনদেন সম্পন্ন না হয়, তবে পুনরায় চেষ্টা করার আগে ব্যাংকে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া উচিত। কখনো যদি একই লেনদেনের জন্য একাধিকবার টাকা প্রদানের ঘটনা হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গেই উচিত ক্রেডিট কার্ডের ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

চিপ সংযুক্ত কার্ড ব্যবহার করা

বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ডই ব্যবহার করা হোক না কেন, সেই কার্ডটি যদি ইলেকট্রনিক চিপ সংযুক্ত না হয়ে থাকে তবে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে চিপযুক্ত নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। চিপযুক্ত কার্ডগুলো আগের কার্ডগুলো থেকে অনেক গুণ বেশি নিরাপদ।

অনলাইনে বা অফলাইনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যেখানেই টাকা প্রদান করা হোক না কেন, মূল সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে এবং প্রতি সময়ই ক্রেডিট কার্ডের বিল যাচাই করে নেওয়া উচিত। কখনো কোনো অসামঞ্জস্য পাওয়া গেলে ক্রেডিট কার্ডটি যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

লেখক: সফটওয়্যার প্রকৌশলী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *