ঢাকা: সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন চলছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৮৩ জন। তাঁদের মধ্যে ৩১ জন জয়ী হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বাকি উপজেলাগুলোতে জাতীয় পার্টি জিতেছে মাত্র একটি উপজেলায় (কিশোরগঞ্জের তাড়াইল)। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৩৮টি উপজেলায়।
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে আরও ৩৯ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে প্রথম তিন ধাপে ৬৯ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চার ধাপে ৪৫০টি উপজেলার ১০৮ জন চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এই হিসাবে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাচনের তিন ধাপে ৩২৩ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়েছে যথাক্রমে ১০ , ১৮ ও ২৪ মার্চ। চতুর্থ ধাপে ১২৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ৩১ মার্চ।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। একই দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরাও পাল্লা দিয়ে বিনা ভোটে জিতে চলেছেন। চতুর্থ ধাপের হিসাবে দেখা যায়, সব মিলিয়ে ৮৮ জন বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৩৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২২ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান ২৭ জন।
তার আগে তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৫ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৪৮ জন এবং প্রথম ধাপে ২৮ জন বিনা ভোটে জয়ী হন।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় এই নির্বাচনের তিনটি পদে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যে কারণে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিও অতীতের নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম। তৃতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ হয়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ হারে। দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। এই ধাপে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ হারে। আর প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ হারে।
এর আগে ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণের হার ছিল ৭০ শতাংশের ওপরে এবং ২০১৪ সালে ছিল ৬০ শতাংশের ওপরে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭০ শতাংশ। এবার এই পর্যন্ত ভোট পড়ল প্রায় ৪২ শতাংশ। আর দুই ধাপ বাকী আছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভোট পড়ার মাত্রা ৪০ এর কোটা ক্রস করতে পারবে না। ফলে ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচন থেকে এ বারের ভোটের হার অর্ধেকের একটু বেশী।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বিএনপির এক তরফা ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন ৪৮ জন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী আওয়ামীলীগের এক তরফা ভোটে ১৫৪ জন এমপি বিনা ভোটের নির্বাচিত হন। সরকার গঠন করতে লাগে ১৫১ আসন। মানে হল, ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার মত এক তৃতীয়াংশ আসন বিনা ভোটে নেয়। আর ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ ভোটের আগেই সরকার গঠন করার শক্তি সঞ্চয় করে ফেলে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে হট্রগোল।
বিএনপি বলছে, আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। এ অভিযোগের কারণে বিএনপি সিটি নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন বয়কট করেছে। ফলে আওয়ামীলীগ একক ভাবেই উপজেলা নির্বাচন করছে। ওই সকল নির্বাচনে ভোটের প্রতিফলন ঘটেনি মর্মে অভিযোগ এনে ভোটাররা উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে আসছে না। নির্বাচনে ভোটারের অনেকাংশে অনুপুস্থিতি, ভোটকে উৎসব মূখর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। তবে তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে সকলের দাবী। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, বিএনপি আসলেও যদি তৃতীয় ধাপের মত নির্বাচন হয়, তবে নির্বাচন নিয়ে যে অবিশ্বাস চলছে তা কেটে যেতে পারে।
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম