গাজীপুর: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘একাত্তরে যুদ্ধশিশুদের আশ্রয়ে কানাডা সরকার মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু আমরা জাতিরাষ্ট্র হিসেবে মানবিকতার পরিচয় দিতে পারিনি। কারণ আমরা একটা ট্রমার মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠেছি। এর কারণে অনেক নির্যাতিতা তার পরিচয় দিতে চাইতো না। গবেষণার অনুসঙ্গ হতে চায়নি। এরকম ট্রমার মধ্যে থেকেও আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে সহায়তা দিয়েছি, আশ্রয় দিয়েছি।’
আজ ২৭.০৩.১৯ তারিখ বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘৭১-এ পাকিস্তানি বর্বরতা, গণহত্যা নির্যাতন ও যুদ্ধশিশু’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপ-উপাচার্য বলেন, ‘পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে ভুল রাষ্ট্রহিসেবে জন্ম হয়েছে। আমরা চাই আর যেন কোন যুদ্ধশিশুর জন্ম না হয়। আর কাউকে যেন ট্রমা নিয়ে বেড়ে উঠতে না হয়। একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে যেন আমরা প্রতিষ্ঠিত হই। পৃথিবীর কোন দেশে যেন আর ২৫ মার্চ ফিরে না আসে।’
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কানাডা প্রবাসী লেখক-গবেষক মুস্তফা চৌধুরী বলেছেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক যুদ্ধশিশু জন্মগ্রহণ করেছে। অনেক অনাথ শিশুর জন্ম হয়েছে। এসবের কোন সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশে এসব শিশুদের কোন তথ্য-প্রমাণও নেই। এমনকি বাংলাদেশের আর্কাইভেও যুদ্ধ শিশুর কোন ডকুমেন্ট আমি খুঁজে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরে অনেক নারী জবরদস্তিমূলক গর্ভধারণের শিকার হয়েছে। অনেকে জোরপূর্বক আটক হয়েছে। অনেক নারীর গর্ভপাত ঘটেছে। অনেক শিশু জন্মের সময় মারা গেছে। এসবের কোন পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে কানাডা, জেনেভাসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ওই সময়ের কিছু তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। যেগুলো গবেষক হিসেবে অনেক কষ্টে আমি সংগ্রহ করেছি। ওই ডকুমেন্টে যুদ্ধকালীন শিশু জন্মের রেজিস্ট্রি খাতা, শিশুর ওজন, বয়স লেখা আছে। তবে বাবার নামের যে কলাম ছিল সেটি ছিল খালি। আর মায়ের নামের অংশে কারো নাম ছিল, আবার কারো নাম ছিল না। এভাবে বেশ কিছু ডকুমেন্ট আমি সংগ্রহ করেছি। এগুলো বাংলাদেশের কোথাও নেই। ওরাও দিতে চাইতো না। তাদেরকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে ওই তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। আর যাও ছিল ৭৫ এরপর পট পরিবর্তন হওয়ায় সব ধ্বংশ করে দেয়া হয়েছে। ’
মুস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘যেসব যুদ্ধ শিশুর জন্ম হয়েছে তাদের দায়িত্ব কেউ নিতে চায়নি। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- এরা মানবসন্তান। এদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তখন অনেকে ওই শিশুদের নিতে রাজি হল। তাও নাম পরিচয় গোপন রেখে। তবে ওই সময় কানাডাসহ বেশি কয়েকটি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করল। তখন সরকার একটা অর্ডিনেন্স জারি করে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করে। বঙ্গবন্ধু শর্ত দিল ‘যাদেরকে নেয়া হবে তাদেরকে ওই দেশের নাগরিকত্ব দিতে হবে।’ এতে কানাডা ২১ জনের মধ্যে ১৫ জনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ¯œাতোকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র-এর ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
(মোঃ ফয়জুল করিম)
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দফতর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়