নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর ব্রিটেনে ইসলামোফোবিয়া বা মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রায় ৬০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের পেছনে জড়িত রয়েছে উগ্র ডানপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আর এই ইসলামোফোবিয়া থেকেই ব্রিটেনেও নিউজিল্যান্ডের মতো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে পর্যবেক্ষক সংস্থা টেলমামা, হোম অফিস ও সরকারের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে।
টেলমামা সূত্রে জানা যায়, নিউজিল্যান্ডে মসজিদে সন্ত্রাসীর গুলিতে ৫০জন নিহতের পর ব্রিটেনে উগ্রপন্থী মুসলিম বিদ্বেষীরা রাস্তায় ও পরিবহনে মুসলিমদের হেনস্থ করছে। দুষ্কৃতিকারীরা মুসলিমদের মৌখিকভাবে, আকার-ইঙ্গিতে এমনকি শারীরিকভাবে আক্রমণ করছে। তারা জানায়, মুসলিমবিদ্বেষীরা মুসলিম মহিলাদের দিকে পিস্তল তাক করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়, ব্রিটিশ মুসলিমদের গালি দেয়।
এবিষয়ে টেলমামা’র ডিরেক্টর ইমান আত্তা ওবিই জানান, মুসলিমদের প্রতি ঘৃনা ও তাদের উপর আক্রমণ করে ব্রিটেনের কিছু উগ্রপন্থীরা খেলা করে। উগ্রপন্থীরা আগেও ব্রিটেনে মুসলিমদের উপর হেইট ক্রাইম করেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ব্রিটেনের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মতো ব্রিটেনেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। আর ব্রিটিশ পুলিশের কাউন্টার টেররিস্ট ইউনিটের প্রধান এসিস্টেন্ট কমিশনার নেইল বাসু ব্রিটেনে হেইট ক্রাইম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডানপন্থী সন্ত্রাসীরা ব্রিটেনে অন্য কারো পক্ষ হয়ে মুসলিমদের উপর হামলা করতে পারে।
হোম অফিসের পৃথক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ব্রিটেনে ঘৃণাজনিত অপরাধের অর্ধেকের বেশি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা সেসব অপরাধের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়েছে। এর কারন হিসেবে মনে করা হচ্ছে সরকার সম্প্রতি পুলিশ বিভাগ থেকে বাজেট কমিয়ে দিয়েছে।
২০১৮ সালের সরকারের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, সন্ত্রাসের সাথে জড়িত সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এদের ৪৩ শতাংশ সাদা ব্রিটিশ আর ৩২ শতাংশ এশিয়ান।
এদিকে ব্রিটেনের বার্মিংহামের জনপ্রিয় একটি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ বর্ণবাদী গ্রাফিতির শিকার হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন রেস্তোরাঁটির মালিক মুজিবুর রহমান। গত সপ্তাহে সোলিহাল এলাকায় তার পরিচালিত স্যাফ্রন টেইকওয়ে রেস্তোরাটির দেয়ালে বর্ণবাদী শব্দ ‘পাকি’ বড় বড় কালো অক্ষরে প্লাস্টার করা হয়। ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের পুলিশ বর্ণবাদী ঘটনাটি তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
‘পাকি’ শব্দটি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আসা মানুষদের বর্ণবাদী নিপীড়নে ব্যবহার করা হতো। যুক্তরাজ্য সরকার শব্দটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
১৯৯১ সাল থেকে বার্মিংহামে বাস করছেন মুজিবুর রহমান। বর্ণবাদী গ্রাফিতির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি হতাশ। ভয়ানক ব্যথিত। সত্যি কথা বলতে আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না। যা ঘটেছে তা খুব অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, সোলিহালে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাস করছি। কিন্তু এমন কিছু আগে কখনও ঘটেনি। আমাদের কখনো মনে হয়নি আমরা অন্য দেশ থেকে এসেছি। এটা আমাদের দেশ।
রেস্তোরাঁয় এই গ্রাফিতি হামলা হয় ১৯ মার্চ। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার কয়েকদিন পর এই হামলা হলো। ওই হামলার পর বার্মিংহামের ছয়টি মসজিদে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পাঁচটি হামলার ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ কনস্টেবল ম্যাট ওয়ার্ড বলেন, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডে আমরা মসজিদ ও স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ অব্যাহত রেখেছি। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি রয়েছে। যারা ভয়, অনিশ্চিয়তা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে করা গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদে হামলার পর ব্রিটেনের ইসলামি স্থাপনা ও যুক্তরাজ্যজুড়ে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। তবে রেস্তোরাঁয় গ্রাফিতির হামলার সঙ্গে মসজিদগুলোতে ভাঙচুরের সম্পর্ক নেই বলে মনে করছে পুলিশ।