আগামীকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়- ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জল সোনালী দিন। এ দিনে বিশ্ব মানচিত্রে দেশমাতৃকার স্বাধীন সত্তা প্রকাশিত হয়েছে। আজকের এই দিনে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
বিবৃতিতে বলা হয়- ‘গত ৩০ ডিসেম্বর আগের দিন মধ্যরাতের নজীরবিহীন নির্বাচনের পর সুষ্ঠু নির্বাচনকে চিরদিনের জন্য নির্বাসিত করার মাধ্যমে জনগণকে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। আজো লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার অপতৎপরতায় লিপ্ত দেশি-বিদেশি চিহ্নিত মহল।’
স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়- ‘যাদের আত্মত্যাগে আমরা অর্জন করেছি স্বজাতির মুক্তি। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ সকল জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি আমি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। স্মরণ করি সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা, যাদের নয়মাস জীবন মরণ লড়াইয়ে আমরা বিজয় লাভ করেছি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সব মা-বোনদের কথা, যারা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।’
‘২৬ মার্চ আমাদের এমন এক মহিমান্বিত দিন, আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অর্জন, স্বাধীনতা যা সংগ্রাম আর যুদ্ধের রক্তস্নাত পথে বিশ্ব মানচিত্রে উদ্ভাসিত হয় আমাদের মাতৃভূমি। এ দিনে দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন জাতীয় নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতিতে তার ঐতিহাসিক ঘোষণায় দিশেহারা জাতি পেয়েছিল মুক্তিযদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভয়মন্ত্র। ফলে দীর্ঘ নয়মাস ইতিহাসের এক ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর জাতি মুক্তিলাভ করে। একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এদেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। নানা কারণে আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হইনি।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়- ‘বার বার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী শক্তি আমাদের সে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। দেশি-বিদেশী চক্রান্তের ফলে আমদের গণতান্ত্রিক পথচলা বারবার হোঁচট খেয়েছে। এখন গণতন্ত্রের চিরবিদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনই বারবার অবিচল আপসহীন আন্দোলনে গণতন্ত্রকে স্বৈরশাহীর লোহার খাঁচা থেকে অর্গলমুক্ত করেছিলেন। এই দুঃশাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রচেষ্টা, দুর্বল করা হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে।’
“আজো বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার এক গভীর চক্রান্ত চলছে। সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত প্রতিহত করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং গণতন্ত্রের নুয়ে পড়া পতাকাকে সমুন্নত রাখতে আমাদের সকলকে অমিত বিক্রমে রাজপথে নেমে আসতে হবে। কারামুক্ত করতে হবে আমাদের প্রিয় নেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। এজন্য গড়ে তুলতে হবে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আজ দেশবাসীর প্রতি এ আহবান জানাই। দেশবাসী সকলের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।”
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আজকের এই মহান দিবসে আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে- যার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এদিনে গোটা জাতি ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই সকল জাতীয় নেতার প্রতি, যারা দেশ ও জাতির জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন।”
‘বিশাল রক্তস্রোত আর ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে মহিমান্বিত আমাদের স্বাধীনতা। কথা ছিল একটি পতাকা পেলে দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু দেশের মানুষ সেই সুখ, শান্তি পায়নি।’
তিনি বলেন, “দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য আজো দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে যাত্রা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন সেটিও আজকে বিনষ্ট করে গণতন্ত্রের নামে কর্তৃত্ববাদী অপশাসন চালু করা হয়েছে। কেউ যাতে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার নিয়ে কথা না বলে, নাগরিক স্বাধীনতার জন্য আওয়াজ না তোলে সেজন্যই বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম জিয়াকে বন্দী করার অর্থ গণতন্ত্রকেই বন্দী করে রাখা। নাৎসীবাদের চরম উত্থানে দেশবাসী ভয় ও আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। তাই স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক শক্তির এ মুহূর্তে গড়ে তুলতে হবে ইস্পাত কঠিন ঐক্য।”
‘আর এজন্যই সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বিপুল জনসমর্থিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও অপহৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সাহসী সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’