ঢাকা: দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী নতুন নেতৃত্বের প্রথম কার্যকরী পরিষদ সভা আজ। সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় সংসদের সভা ভিসির কার্যালয় সংলগ্ন আবদুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এবং হল সংসদের সভা স্ব স্ব হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে পুনঃনির্বাচনের দাবি করা ভিপি নুরুল হক নুর দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও পুনঃনির্বাচনের দাবির যে আন্দোলন সে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মেনডেটকে প্রাধান্য দিয়েই দায়িত্ব নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’ নুর এবং আখতার ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন প্রমুখ। এ সময় ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে আগামীকাল অনুষ্ঠেয় ডাকসুর কার্যকরী সভায় আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবো। পুনঃনির্বাচনের দাবিসহ শিক্ষার্থীদের অন্য যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করতে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে।
পুনঃনির্বাচনের চাওয়া আমাদের বরাবরের মতোই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম এবং ডাকসু নির্বাচনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অঙ্গসংগঠন বা কথা বলার জায়গা রয়েছে, সেসব জায়গায় অনিয়ম নিয়ে কথা বলতেই আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি জাতীয় নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যখন মানুষের মধ্যে ভোটের প্রতি অনাস্থা ও বিরূপ ধারণার চিত্র ফুটে উঠেছে, মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না কিংবা একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দিচ্ছে সেরকম একটা পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সে জায়গা থেকে সমগ্র জাতির প্রত্যাশা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি নির্বাচন হবে যেটি পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু খুব হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, শুধু আমরা নয় সমগ্র জাতি দেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নবিদ্ধ হলে পুরো বাংলাদেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’ এ সময় তিনি রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার আবারো পদত্যাগ দাবি করেন। বলেন, ‘নির্বাচনের দিন রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ম্যাম আমিসহ অন্যান্য প্রার্থী ও সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা শিক্ষকসুলভ ছিল না। নৈতিকতার জায়গা থেকে তিনি প্রাধ্যক্ষ থাকতে পারেন না। আমি তার পদত্যাগ দাবি করছি।’ দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মেধাভিত্তিক সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে অর্থ ও পেশীশক্তি নির্ভর অপরাজনীতির বিকাশ ঘটেছে। সেই জায়গা থেকে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানাই।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হল আর বিজয় একাত্তর হল ছাড়া অন্য হলগুলো প্রশাসন যেন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কাছে ইজারা দিয়েছে। যে মেধা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, সেই মেধা ও অর্থনৈতিক অবস্থা দেখেই হলে তাদের আসন নিশ্চিত করতে হবে।
কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করে মিছিল-মিটিং করানো যাবে না এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে হলে সিট দেয়া যাবে না।’ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ডাকসুতে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ফারুক হোসেন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুরুল হককে ভিপি পদে নির্বাচিত করেছে। আমরা তিন দিন ধরে শিক্ষার্থীদের মোটিভ ও মতামত জানার চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, নুরের দায়িত্বভার গ্রহণ করা উচিত। কলঙ্কিত নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তাকে ত্বরান্বিত করার জন্য নুরের দায়িত্ব নেয়া উচিত। এ ছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও তিনি কাজ করে যাবেন।’