মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন বগুড়ার আজিজার রহমান। বিঘা প্রতি এক হাজার টাকা লগ্নি করে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন ২০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি আয় করেছেন প্রায় ১৬ হাজার টাকা। আজিজারের মত আরো সহস্র মিষ্টি কুমড়া চাষি এখন সুদিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এবার বাম্পার ফলনে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় মিষ্টি কুমড়ার চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।
বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নের কদিম পাড়ার কৃষক আজিজার রহমান জানান, তার একবিঘা জমিতে প্রায় ১০০ মন মিষ্টি কুমড়ার ফলন পেয়েছে। পাইকাররা তার নিকট থেকে একশ’ কুমড়া ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা দরে ক্রয় করেন।
তার ১ বিঘা জমিতে ১০০০ মিষ্টি কুমড়ার ফলন হয়ে থাকে। প্রতিটি কুমড়া ৪ কেজি হলে ৪ হাজার কেজি মিষ্টি কুমড়ার ফলন হচ্ছে। সেই অনুপাতে প্রতি বিঘায় ১০০ মন মিষ্টি কুমড়ার ফলন পায় আজিজার।
তিনি বলেন, এক হাজার টাকা এক বিঘা জমিতে লগ্নি করে ২০ হাজার টাকায় মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদ দিলে প্রায় ১৬ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, তার নিজস্ব ১ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে সে এখন আরও ৪ বিঘা পত্তন নিয়েছে। সেই জমিতে ধান, আলু, কুমড়া, শশা চাষ করেন।
আজিজারের মিষ্টি কুমড়া চাষ দেখে ওই এলাকার মানুষ মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকছেন। মিষ্টি কুমড়া চাষ করে গ্রামের কৃষকদের হাটে হাটে নিয়ে ঘুরতে হয় না। শহরে ব্যবসায়ীরা গ্রামে গিয়ে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে। তার মিষ্টি কুমড়ার ভাল ফলন দেখে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ চাষবাস শুরু করেছে। আজিজার জানান, তিনি বেশি সময় দিতে পারেন না। তার স্ত্রী ও কন্যা এই মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত দেখভাল করেন।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, রবি ও খরিপ মৌসুমে বগুড়ায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এ থেকে ১ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়। মিষ্টি কুমড়া চাষ এখন লাভজনক সবজি। অন্য ফসলে যত বেশি শ্রম দিতে হয় এখানে তেমন সেচ, বীজ ও কীটনাশক দিতে হয় না। যৎসামান্য খরচেই এই কুমড়া চাষ করা যায় বলে চাষিরা লাভবান হয়ে থাকে। বিঘা প্রতি খরচ পড়ে প্রায় ১ হাজার টাকা। তিনি জানান, অনেক কৃষকই আলুর সাথে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে থাকে। একই জমি থেকে আলু উত্তোলন করার পর মিষ্টি কুমড়া উত্তোলন করে থাকে।
বগুড়ার পুষ্টি কর্মকর্তা সিনহা আজাদ জানান, ১ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় ৩৩৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ভিটামিন এ ও বি পাওযা যায়। মিষ্টি কুমড়ায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায়। এ ছাড়া আঙ্গুলের নখ সুন্দর রাখে।
বগুড়ার মহাস্থান হাটের মিষ্টি কুমড়ার পাইকারি ব্যবসায়ি ইমাম হোসেন জানান, ঢাকা, সিলেট ও চট্রগ্রামে মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা আছে। বগুড়ার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়ার আলাদা স্বাদ থাকায় চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। বগুড়ার চাষিদের কাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে ট্রাকে লোড দিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে থাকে।