গাজীপুর: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলেও প্রথম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৯ মার্চ, গাজীপুরে। গাজীপুর শহরের রেলক্রসিং এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে ওই সম্মুখ সমরে শহীদ হন ৪জন, গুলিবিদ্ধ হয়েও আহত হন আরো অনেকে। কিন্তু তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়া তিন যোদ্ধা ৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ পায় নি। প্রতি বছর ১৯ মার্চ আসলেই জীবিত ওই কিংবদন্তিরা ও তাদের পরিবার মিডিয়া পাড়ায় দৌঁড় ঝাপ করে ১৯ মার্চের পর শান্ত হয়ে যান। এই ভাবেই চলছে ৪৮ বছর। আর ৪৮ বছর ধরেই চলছে প্রথম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ ওই তিন যোদ্ধার আর্তনাদ।
হতভাগা তিন গুলিবিদ্ধ যোদ্ধারা হলেন , সন্তোষ কুমার মল্লিক, ইউসুফ আলী সরকার ও শাহজাহান মিয়া। তাদের ও তাদের পরিবারের দাবী, প্রথম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ ও যোদ্ধাদের যথাযথ মূল্যায়ন করে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিলে তারা মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সালামের সৌভাগ্য অর্জন করতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক একটি প্রবন্ধ লিখেন। ওই প্রবন্ধেও গুলিবিদ্ধ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার মল্লিক, ইউসুফ আলী সরকারদের নাম রয়েছে।
এ ছাড়ও প্রতিবছরই ১৯ মার্চকে কেন্দ্র করে প্রথম স্বশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটি ও ওই দিনের যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ থেকেই যায়।
এ সকল বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও অভিযোগের সমাপ্তি ঘটে না পুরোপুরি।
প্রসঙ্গত: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর আন্দোলন দুর্বল করতে অন্যান্য সেনানিবাসের মতো জয়দেবপুরের দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের কৌশলে নিরস্ত্র করার জন্য তাঁদের অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা ব্রিগেড সদর দপ্তর। কিন্তু মুক্তিকামী বাঙালি সৈন্য ও স্থানীয় জনতা তাদের মতলব বুঝতে পেরে অস্ত্র জমা না দিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্য সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
১৯ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের সতর্কতা ও রাস্তায় আন্দোলনকারীদের দেখে অস্ত্র জমা নেওয়ার আশা ত্যাগ করে ঢাকায় ফিরছিলেন। এ সময় ছাত্র-জনতা জয়দেবপুরের রেলক্রসিং এলাকা ও চান্দনা চৌরাস্তায় তাদের বাধা দেন। এ সময় পাকিস্তনি বাহিনী গুলি ছুড়লে ছাত্র-জনতা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন হুরমত, নিয়ামত, কানু মিয়া ও মনু খলিফা। আহত হন আরও অনেকে।
এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম। তখন স্লোগান ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ওটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ।
ভাওয়াল রাজবাড়ির সামনে জাগ্রত ১৯ মার্চ স্মারক ভাস্কর্য ছাড়া দীর্ঘদিনেও ১৯ মার্চের শহীদদের বীরত্বগাথা সংরক্ষণে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো পদক্ষেপ। লিখিত ইতিহাস না থাকায় সেদিনের সংগ্রাম হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।