নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে এক বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৯ জন মুসুল্লি। পরপর দুটি মসজিদে ঢুকে গুলি চালায় সে। দুটি মসজিদেই তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে দুই মুসুল্লি। কিন্তু তাকে ঠেকানো যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পত্রিকাকে।
শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের লিনউড মসজিদে গিয়েছিলেন সৈয়দ মাহজারউদ্দিন। এদিন দ্বিতীয় যে মসজিদটিতে হামলা হয়েছিল সেটি লিনউড মসজিদ। আল নুর মসজিদে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে সন্ত্রাসী ট্যারেন্স লিনউড মসজিদে যায়। গিয়েই শুরু করে গুলি।
মুসুল্লিদের ওপর গুলি শুরু হলে মাজহারউদ্দিন কোন মতে বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারেন। তবে চোখের সামনেই গুলিবিদ্ধ হতে দেখেছেন অনেককে। জানিয়েছেন, কিভাবে একজন হামলাকারীকে প্রতিহত করতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
খুব কাছ থেকে হত্যাকাণ্ড দেখেছেন মাজহারউদ্দিন। ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডের এক সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। মাজহার বলেন, গুলি শুরু হতেই লোকজন ভয়ে চিৎকার শুরু করে। আমি কোন কিছুর আড়াল পেতে চেষ্টা করি। আমি এক পাশে দাড়াতেই দেখি সন্ত্রাসীটি প্রধান দরজা দিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করছে।’
মাজহার জানান, লিনউড মসজিদটি খুব বেশি বড় নয়। ভেতরের মূল কক্ষে ৬০-৭০ জন মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারে এক সাথে। মাজহার বলেন, দরজার কাছে বয়স্করা চেয়ার নিয়ে নামাজ পড়ছিলেন। সন্ত্রাসী ঢুকেই তাদের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। হামলাকারীর মাথায় হেলমেট ও গায়ে আত্মরক্ষামূলক বর্ম ছিলো। অত্যন্ত হিংস্রতার সাথে সে গুলি চালাতে থাকে।
এক পর্যায়ে মুসুল্লিদের একজন তাকে প্রতিরোধ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চোখের সামনেই সেই সাহসী বীর মুসুল্লিকে হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখেন মাজহার। তিনি বলেন, মসজিদটি দেখাশোনার কাজ করেন এমন এক যুবক এই সাহসের পরিচয় দেন। সে একটি সুযোগ দেখামাত্রই সন্ত্রাসীকে ঘুষি মারেন এবং তার বন্দুক কেড়ে নেন।’
মাজহার বলেন, ‘সেই বীর তাকে প্রতিহত করতে চেষ্টা করেন; কিন্তু বন্দুকের ট্রিগার খুজে পাচ্ছিলেন না’। ধারণা করা হচ্ছে বন্দুক ব্যবহারে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে তিনি দ্রুত গুলি চালাতে পারেননি। মাজহার আরো বলেন, সে হামলাকারীর পেছন পেছন যায় কিন্তু বাইরে একটি গাড়ির ভেতর কয়েকজন লোক অপেক্ষা করছিল তার জন্য, সেই গাড়িতে উঠে সে পালিয়ে যায়।’
মাজহার বলেন, তার বন্ধুদের মধ্যে একজনকে বুকে ও একজনের মাথায় গুলি লেগেছে। তার এক বন্ধু ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। আরেক জনের শরীরে গুলি লাগার পর প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তিনি দ্রুত জরুরী সেবা নম্বরে যোগাযোগ করেন। মাজহার বলেন, আমি সাহায্যের আশায় দৌড়ে বাইরে এলাম। তখন পুলিশ আসে; কিন্তু তারা আর আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি, তাই আমার বন্ধুকেও আর বাঁচাতে পারিনি। এর অন্তত আধা ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স এসেছে, আমার মনে হয় সে আর বেঁচে নেই।
খালেদ আল নোবানি নামের আরেক মুসুল্লি জানান, তিনি আল নুর মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন(যেখানে প্রথম হামলা হয়)। তিনি বলেন, মসজিদের প্রবেশদ্বারে দুজনকে হত্যা করে সন্ত্রাসী ভেতরে ঢোকে। একটি দরজা দিয়ে বের হয়ে দ্রুত বাচ্চাদের নিরাপদে নিয়ে যেতে থাকি।
এই মসজিদেও একজন হামলাকারীর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে সন্ত্রাসী। নোবানি বলেন, এক লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিহত করতে চেষ্টা করে; কিন্তু কাছ থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসী।
মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী পথের কাছে যাদের পেয়েছে তাদের ওপরও গুলি চালিয়েছে। নোবানি বলেন, তার এক বন্ধু ও তার ৫ বছর বয়সী কন্যা তখন মসজিদে ঢুকছিলো। তারা দুজনই এখন হাসপাতালে।
ঘটনার পর পুলিশ আসতে ২০ মিনিটি সময় লেগেছে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আল নোবানি। তিনি বলেন, জায়গাটি শহরের একেবারে মাঝখানে, এখানে পুলিশ আসতেই যদি ২০ মিনিটি সময় লাগে তাহলে কিভাবে এসব ঘটনা ঠেকানো যাবে? রাস্তায় গাড়িও ছিলো না, পুলিশ আসতে ২ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়’।
নোবানি জানান, সিরীয় উদ্বাস্তু তার এক বন্ধু নিহত হয়েছে। স্ত্রী ও ৪ সন্তানকে নিয়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সে নিউজিল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছিল।