জাতীয় পার্টিকে (জাপাকে) নিয়ে জনমনে সৃষ্ট প্রশ্ন সম্পর্কে জবাব দিতে গিয়ে সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা ও দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বর্তমান বিরোধী দল কৃত্রিমভাবে তৈরী। এটা কিছুটা হতে পারে। কারণ জাপা (জাতীয় পার্টি ) সরকারি জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করেছে। তবে সম্পূর্ণ কৃত্রিম বিরোধী দল নয়।
অনেকে বলেন সবকিছু পাতানো খেলা। জাপা সরকারি জোটে থেকে নির্বাচন করেছে। এজন্য তারা মনে করছেন এখন হয়তো বিরোধী দলে থেকেও জাপা কর্যত সরকারের পক্ষ হয়েই কাজ করবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিরোধী দলীয় নেতা এইচএম এরশাদের অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলের পক্ষে মূল বক্তব্য রাখেন তিনি।
জাপার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জিএম কাদের আরো বলেন, বর্তমান যে সংসদীয় ব্যবস্থা এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, তাতে এখানে যারাই বিরোধী দলে থাকুক না কেন ফল কী হবে সবাই জানে। ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো দলের সদস্য সেই দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। যার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে। এই ব্যবস্থায় সবসময় জিতে সরকারি দল, আর বিরোধী দল সবসময় সংসদে হারে। আমি মনে করি, এটাই আসলে পাতানো খেলা। সেই কারণে আমি বলবো, আসলে ’৯০ এর পর থেকে প্রতিটি সংসদেই চলছে পাতানো খেলা। আমরা যদি সংখ্যায় আরও বেশি থাকতাম, বেশি করে হইচই করতে পারতাম, দেখতে সংসদকে প্রাণবন্ত মনে হত। কিন্তু বাস্তব অবস্থা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারতাম না।
তিনি তার বক্তব্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের আপত্তিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও পরে সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। এসময় তিনি দূর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষে নেওয়ার আহবান জানান। এছাড়া বিমান বন্দরে প্রবাসীদের হয়রানী বন্ধের দাবি জানান।
এরশাদের জন্য দোয়া চাইলেন রওশন:
জিএম কাদেরের আগে নিজের দেওয়া বক্তব্যে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও দশম সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ পার্টি চেয়ারম্যান ও নিজের অসুস্থ স্বামী ও বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেব অসুস্থ। তবে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি সুস্থ হয়ে তিনি সংসদে আসতে পারবেন। তার জন্য আমি সবার কাছে শুভ কামনা ও দোয়া চাচ্ছি। ’
সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা আরো বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐকমত্য ছাড়া উন্নয়ন-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতিও তার ভাষণে বলেছেন- জাতীয় ঐক্যমত্য ছাড়া শান্তি স্থায়ীরূপ পায় না। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশকে পরিচালনা করতে হলে ঐকমত্যের বিকল্প নেই। দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
এসময় তিনি বলেন, দশম সংসদে বিরোধী দল হিসেবে আমরা গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছি। সবাই আন্তরিকভাবে মিলেমিশে কাজ করেছি। সরকারের প্রতিটি উন্নয়নে আমরা সহযোগিতা করেছি। আমার মনে হয় স্বাধীনতার পর কেনো সংসদ এত সুন্দরভাবে চলেনি। অতীতে আমরা দেখেছি- যখনই সরকার উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়, তখনই বিরোধী দল বাধা দিয়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে।
তিনি বলেন, ’৯৬ এর পর থেকেই মূলত উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু হয়। এর আগে উন্নয়ন থেমে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুৃর জন্ম শতবার্ষিকী সঠিকভাবে পালনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এমনভাবে পালন করতে হবে যেন এটা মাইলফলক হয়ে থাকে।
রওশন বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা রাখা দরকার। এছাড়া ফেসবুক সীমিত সময়ের জন্য বন্ধ রাখার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, এটা করলে শিক্ষার্থীরা শান্তিমত ঘুমাতে পারবে, ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারবে। কারণ ফেসবুক অনেক অশান্তি সৃষ্টি করে।