ঢাকা: আদিবাসী ও দলিতরা আজো সমাজে অবহেলিত। শুধুমাত্র পরিচয়ের কারণে সরকারি সেবা পেতে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। আর এই ঘুষের পরিমাণ ২০ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠেছে। প্রতিবেদনে এই অবস্থা পরিবর্তনে বৈষম্য বিলোপ আইন পাসসহ সংবিধান ও আইনের সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।
আজ রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ‘বাংলাদেশের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী : অধিকার ও সেবায় অন্তর্ভূক্তির চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উত্থাপন করেন টিআইবি’র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যপবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও পরিচালক (রিসার্স এন্ড পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠি আদিবাসী ও দলিতরা এখনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি। তারা সর্বক্ষেত্রে নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের আর্থ-সমাজিক অবস্থান উন্নয়নে যে সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানেও নানা হয়রানি ও বঞ্চনার মুখোমুখী হতে হয়। যা শুধুমাত্র পরিচয়ের কারণে। অথচ আমরাই এ ধরণের বৈষম্য ও বঞ্চনার কারণে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আদিবাসী ও দলিতদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি নতুন আইন পাস ও বিদ্যামান আইন সংস্কারে সরকার উদ্যোগ নিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র পরিচয়ের কারণে যে কোন ধরণের অধিকার প্রাপ্তি ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের চরম বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সেবাখাতে বহির্বিভাগ, রোগ নির্ণয়, সন্তান প্রসব ও প্রসুতি সেবা কার্ড পেতে ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে নিয়ম বর্হিভূত অর্থ আদায় করার তথ্য পাওয়া গেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর বরাদ্দ বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, বিধাব ভাতা, দলিত ভাতা, গৃহনির্মাণ ও মাতৃত্বকালীণ ভাতা পেতে ৫শ’ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। স্থানীয় সরকার থেকে জন্ম সনদ, আদিবাসী সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স নিতে এবং সালিশের জন্য সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধ অর্থ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। একই ভাবে জমি বিক্রি ও জলমহল ইজারা নিতে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা ও চাকুরির জন্য ৬ লাখ টাকা ঘুষ প্রদানের তথ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের পাশাপাশি বিদ্যমান আইন ও নীতিতে আদিবাসী ও দলিতদের জতিসত্ত্ব ও বর্ণভিত্তিক পরিচয় এবং অধিকার যথাযথ ভাবে স্বীকৃত না হওয়া এই বৈষম্য ও বঞ্চনা চলছে। একইসঙ্গে সমাজে প্রবাহমান ‘অস্পৃশ্যতা’ ও বৈষম্যের সংস্কৃতি স্থানীয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রতিফলিত হওয়ায় তাদের চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার নিশ্চিত করতে বৈষম্য বিলোপ আইস পাস ও বাস্তবায়নসহ ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিসহ সেবা প্রদানকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চার পরিবর্তনে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।