হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ হামিদুল ইসলাম। সারা দিন অটো চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে ঘুরে সংসারের চাকা। টিনের ছাউনির ছোট্ট একটি ঘরে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে তার বসবাস।
বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা হলে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করতে সমস্যা হতো।
পাশেই টিনের চালার আরেকটি গোয়াল ঘর। ওই ঘরের চালায় বসানো হয়েছে একটি সোলার প্যানেল। সেখানে এসে পড়ছে সূর্যের আলো।
তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ থেকে সৃষ্ট আলো আলোকিত করছে কুড়ে ঘরটিকে ।
হামিদুল ইসলাম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামের গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, আগে রাত হইলে বাচ্চাদের লেখাপড়া করতে কষ্ট হতো।
কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সোলার পেয়ে আমরা অনেক ভাল আছি। আমাদের কুড়ে ঘর আলোকিত হয়েছে। শহরের ছোয়া লেগেছে আমাদের চরাঞ্চলে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদুৎ ও বিদুৎ সাশ্রয়ের লক্ষে সারা দেশের ন্যায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট, হাট বাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে সোলার হোম সিস্টেম ও সোলার প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট।
ল্যাম্পপোস্টে আলোয় গ্রামের মেঠো পথের কাঁচা পাকা রাস্তা ঘাট ও হাটবাজার আলোকিত হওয়ায় উপকৃত হচ্ছেন এলাকাবাসী ও পথচারিরা। ফলে রাস্তাঘাটে কমেছে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
তবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে রাস্তায় আরো পর্যাপ্ত পরিমাণ সোলার প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।
বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন ঘুরে, উপজেলার সানিয়াজান, ডাউয়াবাড়ি, গড্ডিমারী ও সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে এসব সোলার প্যানেল।
এসব সোলার প্যানেল চরাঞ্চলের বসতবাড়ি, হাটবাজার, সরকারি-বেসরকারি, ধর্মীয়, ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ নানা স্থানে বসানো হয়েছে। আর সেই সোলারের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো চরাঞ্চল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ২ কোটি ২৮ লক্ষ ১০ হাজার ৫’শ ৮ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়’র গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায়, আভা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সহযোগীতায় টিআর, কাবিখা, ও বিশেষ বরাদ্ধে ১২৫৪টি ও ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩০ লক্ষ ৯৭ হাজার ৩’শ ২ টাকা ব্যয়ে প্রথম পর্যায়ে ৬০০ টি সোলার হোম সিস্টেম ও ১৮ টি সোলার প্যানেলের স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ করা হয়েছে।
এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের হতদরিদ্র বিদ্যুৎবিহীন পরিবার, মসজিদ, মন্দির ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫’শ টি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও যেসব রাস্তায় মানুষের চলাচল বেশী অর্থাৎ রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাঁকা রাস্তার মিডিলে হাট বাজারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ পর্যন্ত ১৮ টি সোলার প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট (স্ট্রিট লাইট) স্থাপন করা হয়েছে।
উপজেলার সিন্দুর্না চর এলাকার রহিম উদ্দিন, রওশন আরা, চর ধুবনী এলাকার শহর আলী, খাদিজা বেগম, গড্ডিমারী এলাকার শ্রী অমূল্য কুমার রায়, হাসানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, চর অঞ্চল গুলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। তাই মানুষ সম্পূর্ণভাবে সোলারের আলোর ওপর নির্ভরশীল।
এ আলোয় চরাঞ্চলের মানুষ রাতে অনেক সময় ধরে কাজকর্ম করতে পারছেন। সেই সাথে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ জানান, বিদুৎতের চাহিদা মেটাতে সরকারের উদ্যোগে ঘরে ঘরে সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হচ্ছে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি সেই এলাগুলোর হতদরিদ্র পরিবার গুলোর মাঝে আমরা সোলার প্যানেল বিতরণ করছি।
রাতের বেলায় উপজেলার রাস্তা ঘাট ও হাট বাজারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান আলোকিত করার লক্ষে সোলার প্যানেলের স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ গ্রাম হবে শহর।
এ উদ্যোগকে সামনে রেখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়’র গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
যার সফলতা ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ পেতে শুরু করেছে।
আগামীতে এ উপজেলার চর অঞ্চলগুলো যাতে শহরে রুপান্তরিত করা যায় এরকম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
আশা করছি তা বাস্তবায়ন করতে পারব।