কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা চান। একই সাথে তার মুক্তির বিষয়ে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি শিগগিরই রাজপথে আন্দোলনের কথাও চিন্তা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। এ জন্য কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেছেন তারা। তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। এ ছাড়াও বৈঠকে আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন নিয়ে করণীয় ঠিক করেন নীতিনির্ধারকেরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা ইতোমধ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে অবিলম্বে তাকে সুচিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, তিনি হাঁটতে পারছেন না, কিছু ধরে রাখতেও পারছে না। এই মুহূর্তে তাকে সুচিকিৎসা দেয়া সবার আগে প্রয়োজন। এসব নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া দেশনেত্রীর মুক্তির বিষয়ে আইনি লড়াইও চলবে। পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলনের জন্য কী কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
বিএনপির বিক্ষোভ
দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে এগিয়ে যায়। পরে স্কাউট মার্কেট ঘুরে ফকিরাপুল অভিমুখে কিছুদূর এগিয়ে নয়াপল্টন মসজিদ ঘুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে মিছিলটি শেষ হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার আইন, বিচার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছে। গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কব্জায় রাখার চেষ্টা করছে। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে বলেই আমাদেরকে রাজপথেই অবস্থান নিতে হবে। মিডনাইট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা প্রতিহিংসাচরিতার্থ করতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে।
তিনি বলেন, নির্দোষ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গায়ের জোরে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। মানুষ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার সব মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথই আমাদের একমাত্র ঠিকানা। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে রাজপথেই গণতান্ত্রিক শক্তির উদ্বেল অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া গণতন্ত্রের মুক্তি আসবে না, দেশের জনগণ চিরদিনের জন্য তাদের নাগরিক স্বাধীনতা হারাবে।
রিজভী বলেন, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন এখন আরো নিষ্ঠুর চেহারা নিয়ে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। দেশবাসীর জীবন ও নিরাপত্তা এখন গভীর সঙ্কটাপন্ন। সাধারণ মানুষ গুমের ভয়ে, বিচারবহির্ভূত হত্যার ভয়ে, গায়েবি মামলার ভয়ে শঙ্কা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এই নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি চলতে দেয়া যায় না। বিদ্যমান অন্ধকার অমানিশার অবসান ঘটাতে হবে। এ জন্যই সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে হবে।
মিছিলে ঢাকা মহানগর যুবদল, ছাত্রদল ও মৎস্যজীবী দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। ওই দিনই তাকে আদালতের পাশে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দী তিনি। তার মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনাসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর মধ্যে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়ে তা পণ্ড করে দেয়।