হাসানুজ্জামান হাসান,স্টাফ রিপোর্টারঃ তিস্তা নদীর ধুধু বালুচর এখন সোনালী ফসলে পরিনত হয়েছে। উপজেলার কোলকোন্দ ও লক্ষীটারি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ধু-ধু বালুচরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি।
সেই জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছে নদী পাড়ের কৃষকরা। চরগুলোতে বিভিন্ন ফসলের চাষ সৃষ্টি করেছে সবুজের সমারোহ।
একদিকে তিস্তার ধু-ধু বালুচর অন্যদিকে বিস্তৃত সবুজ মাঠ যা এক অভিন্ন মনোরম দৃশ্য।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে নদীটি ড্রেজিং বা পুন:খনন না করার কারণে পলি জমে রাক্ষসি ও খরস্রোতা তিস্তা এখন শাখা নদী ও নালায় পরিনত হয়েছে।
নদীতে জমি হারানো ওই এলাকার পরিবারগুলো জেগে ওঠা চরে শুরু করেছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ।
নোহালী,কোলকোন্দ, গঙ্গাচড়া, লক্ষীটারি ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের জেগে ওঠা তিস্তা নদীর ধুধু বালুচরে এখন শোভা পাচ্ছে আলু,মরিচ, পেয়াজ, সরিষা, ভূট্টা, গম, লাউ, কুমড়ো বাদাম, টমেটো, ইরি বোরো সহ বিভিন্ন ফসল।
চরাঞ্চলের কৃষকরা পরিবার পরিজন নিয়ে দিন রাত খেয়ে না খেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তিস্তার বুকে ফলাচ্ছেন ফসলের বাম্পার ফলন। হয়ে উঠছেন সাবলম্বি।
গঙ্গাচরা ইউনিয়নের গান্নাড়পাড় এলাকার কৃষক হযরত অালী (৫৬) জানান ২৫ বছর আগে নদী গর্ভে বসত বাড়ী সহ আদী জমি বিলিন হয়ে যাওয়ায় আমি সর্বশান্ত হয়ে গেছি এখন নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া জমিগুলো জেগে ওঠায় আমি বিভিন্ন রকমের ফসল চাষ করছি।
এই আবাদ থেকে যা আয় হবে তা দিয়ে সামনের ৬ মাস সংসার চালাবো। এভাবে হাজার হাজার পরিবার আজ তিস্তার জেগে ওঠা জমিতে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছে।
অপরদিকে বেকার হয়ে পরছে নৌ শ্রমিক ও জেলেরা।
নদীতে পানি না থাকায় যেমন নৌকা চলছে না তেমনি জেলেরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ।
দিন দিন তারা হয়ে পরছে বেকার। একসময় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা চর ইচলি এলাকার বাসিন্দা জেলে বাবু চন্দ্র (৫০) বলেন, ভরা মৌসুমে নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে মাছ হবে কিভাবে, শুকনো মৌসুমে নদী যখন ছোট হয়ে আসে তখন নির্বিচারে ছোট মাছ এবং মা মাছ ধরার কারনে এখন আর নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে আমাদের কে উপজেলা মৎস কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জেলে নিবন্ধন কার্ড দিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কিছুই দেয়নি।
যদি শুকনো মৌসুমে সরকারি ভাবে আমাদের মাঝে কিছু সহযোগিতা দেয়া হতো তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো না । মর্ণেয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গাগড়ার চর এলাকার বাসিন্দা আ:ওহাব (৩৫)জানান আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগে এলাকার মানুষ অত্যন্ত কষ্ট করে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছিলো।
এখন তারা জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসল আবাদ করে কষ্ট গুলো দূর করা এবং স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে।
নোহালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল বাগডোহড়ার চর এলাকার বাসিন্দা মহিলা ইউপি সদস্য মীনা বেগম (৪৭)জানান এই এলাকার মানুষের বন্দরে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় নদী এবং চর পাড়ী দিয়ে বহু দূরে উৎপাদিত ফসল নিয়ে যেতে অনেক ব্যায়ও কষ্ট করতে হয় যার ফলে এলাকার মানুষ উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বি ত হচ্ছে।
তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও উপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যদি বাগডোহড়া থেকে নোহালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারে যাওয়ার রাস্তা করে দিতো তাহলে এ অ লের কৃষকদের আর অভাবে দিন কাটাতে হতো না।
লক্ষীটারি ইউনিয়নের ইচলীচরের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া চরা লের বিদ্যালয় গুলোর পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি জানান গঙ্গাচড়া উপজেলার অন্তর্গত তিস্তার চর গুলো থেকে বন্দরের বাজারে যাওয়ার সহজ কোন রাস্তাঘাট না থাকায় ছাএ-ছাত্রীদের লেখা পড়া, উৎপাদিত ফসলের বাজারজাত, চিকিৎসা ব্যবস্থা সহ বহুবিধ সমস্যা তুলে ধরে এক কথায় তিনি বলেন তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন শুধু কাগজে কলমে।
তিনি আরো বলেন চরাঞ্চলের কৃষকরা এক কথায় ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা,সময় মতো কৃষি দফতরের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা পেলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সহ সরকারের বিপুল উন্নয়নে অংশ নিতে পারবে এবং চরা লের কৃষকরা হতে পারে সাবলম্বী।
নোহালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল বলেন, চরাঞ্চলের রাস্তাগুলো খালখন্দকে ভরা, রাস্তাগুলি শুকনো মৌসুমে মেরামত না করলে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যাবে।