ভারত–পাকিস্তান সংঘাতে ‘সাইবার দুনিয়ায়’ তুমুল যুদ্ধ

Slider বিচিত্র


ঢাকা: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অঘোষিত আকাশযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সাইবার হামলার ঘটনা বাড়তে দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই দুটি দেশের মধ্যে চলমান সাইবার দ্বন্দ্ব নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। দুই দেশেই ভালো মানের হ্যাকারদের উপস্থিতি দীর্ঘ অনলাইন যুদ্ধের দিকেই টেনে নিচ্ছে তাদের।

সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের বিষয়টি এ সপ্তাহে চরম উত্তেজনাকর অবস্থায় পৌঁছেছে। ভারতের যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোর পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও জবাব দেওয়া হয়েছে।

প্রচলিত সামরিক কৌশলের পাশাপাশি দুটি দেশই পারমাণবিক সক্ষমতার অধিকারী। দুই দশক ধরেই দুটি দেশকে অনলাইনে কথার লড়াইয়ে যুক্ত থাকতে এবং হ্যাকিংয়ের ঘটনায় পরস্পরের ক্ষতি করতে দেখা গেছে।

সাইবার দুনিয়ায় সাইবার আক্রমণে সক্ষমতার দিক থেকে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার আধিপত্য দেখা যায়। তবে ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষ হ্যাকিং কর্মসূচি চালানোর দৃষ্টান্ত রয়েছে। দুটি দেশেই প্রযুক্তি–দক্ষ কর্মী ও হ্যাকিং টুলের ব্যবহার দেখা যায়।

১৯৯৮ সালে পাকিস্তানি হ্যাকাররা ভারতের অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে সফল হামলা চালায়। ১৯৯০ সালের পর থেকেই কয়েকবার ভারতে বেশ কিছু সফল হ্যাকিং কার্যক্রম চালিয়েছে পাকিস্তান। হ্যাকিংয়ের বিষয়টিকে আদর্শগত দিক বিবেচনায় সাইবার হামলার সঙ্গে তুলনা করা যায়। অনেক সময় জনপ্রিয় সরকারি বা মিডিয়া ওয়েবসাইটের দখল নেওয়া এবং সেখানে অপমানজনক বার্তা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে বিপর্যস্ত করতে নানা বার্তা ছড়ানো হয়।

জুরিখ সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের হ্যাকাররা সাইবার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি হ্যাকাররা ভারতের কয়েকটি ওয়েবসাইটের দখল নেয়। এর বিপরীতে ভারতের হ্যাকাররাও পাকিস্তানের কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাক করে। ২০১০ সালে পাকিস্তানি হ্যাকাররা ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তথ্য মুছে দেয়। প্রায়ই সম্ভাব্য কোনো আক্রমণের আগে দুই দেশের হ্যাকারদের মধ্যে সাইবার দুনিয়ায় লড়াই ছড়িয়ে পড়ে সবার আগে।

সাইবার প্রতিষ্ঠান প্রুফ পয়েন্টের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তৈরি ম্যালওয়্যার বিভিন্ন ভুয়া ব্লগ ও নিউজ সাইটে ছড়ানো থাকে, যা সক্রিয় হলে ওয়েবক্যাম চালু, ই–মেইল ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। এ ছাড়া আক্রমণকারীর ব্যক্তিগত কম্পিউটারের বিভিন্ন তথ্যের স্ক্রিনশট পাঠাতে পারে। আরেক সাইবার প্রতিষ্ঠান ক্রাউডস্ট্রাইকের তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় হ্যাকারদের তৈরি বিশেষ অ্যান্ড্রয়েড নজরদারির প্রযুক্তি বিভিন্ন মোবাইল ফোনের সিস্টেমে লুকানো থাকে।

ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের বেশির ভাগই ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে ভুয়া বার্তা ছড়ানো ও সংঘাত তৈরির বিষয়টি লক্ষণীয়। গত বছর হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে ভারতে যেসব ভুয়া বার্তা ও গুজব ছড়ানো হয়, তাতে বেশ কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন মারা যায়।

ফেসবুকের সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা অ্যালেক্স স্টামোস এক টুইটে বলেছেন, কয়েক বছর ধরেই ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সাইবার এবং তথ্য আক্রমণে যুক্ত রয়েছে। এ বিষয়টি খুব বেশি আলোচনায় আসেনি।

স্টামোস বলেন, এটা এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে ওঠে নিম্নস্তরের এই অদৃশ্য যুদ্ধগুলো।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় দেশ দুটির গণমাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে উত্তেজনা কমাতে এখন নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হচ্ছে। এসব পরামর্শের মধ্যে একটি হচ্ছে—কোনো গুচ্ছ মেসেজ বা বার্তা এগিয়ে যাওয়া। কেউ যদি একাধিক উৎস বা কারও কাছ থেকে একই রকম বার্তা পেতে থাকেন, তবে তা হোক্স বা ভুয়া কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে। উত্তেজনা নিয়ে কোনো ভুয়া খবর ছড়ানো বা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।

হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা নিয়ে সতর্কতা
মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো নানা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা খবরের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তেজনা বা সংঘাতের সময় এসব মাধ্যমে নানা গুঞ্জন ও ভুয়া খবর ছড়াতে পারে। এসব ভুয়া খবরের পেছনে থাকতে পারে দুই দেশের হ্যাকার বা এ থেকে ফায়দা লোটার সন্ধানে থাকা সাইবার দুর্বৃত্তরা। হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে ভুয়া খবর শনাক্ত করতে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

১. যেসব খবর দেখে আপনার বিরক্তি লাগে বা রাগ হয়, সেসব খবরের উৎস ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবুন। কোনো ভয় দেখানো বার্তা পেলে দমে যাবেন না বা কাউকে শেয়ার করবেন না।

২. হোয়াটসঅ্যাপের ফরোয়ার্ডেড লেভেলের দিকে দেখুন।

৩. কোনো কিছু অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না। তথ্যের উৎস নিয়ে একাধিকবার ভাবুন।

৪. যে তথ্য পেলেন তার ধরন, বানানের দিকে খেয়াল রাখুন। ভুল বানানের তথ্য হলে এর উৎস নিয়ে সন্দেহ হবে। তখন তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।

৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো কোনো ছবি, ভিডিও বা লিংকে হুট করেই বিশ্বাস করবেন না। ছবি সম্পাদনা করা কি না, তা খেয়াল করুন। ভিডিও পুরোনো নাকি নতুন, এর উৎস খেয়াল করুন। যেকোনো লিংকে ক্লিক করার আগে চিন্তা করুন তা আপনাকে কোন সাইটে নিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *