সম্প্রতি লন্ডনে এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ আখ্যা দেওয়ায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলটির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁরা এ জাতীয় বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত না হলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে তারেক রহমানকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তারেক রহমানের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় তারেক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারকে শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে। মানুষের কাছ থেকে জানোয়ার যে শিক্ষা পায়, তাই দেওয়া উচিত এবং মানুষ তা দেবেও।’
তারেক রহমানের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুপুত্রকে জিভ সামলে কথা বলতে বলবেন। নইলে বাংলার মানুষ সহ্য করবে না; বিশ্ববাসীও মেনে নেবে না। আইভী রহমানসহ অনেক মানুষের রক্ত তার (তারেক) হাতে, অবশ্যই এর বিচার হবে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তাঁর দুই পুত্রকে মানুষ বানাতে পারেননি। তবে বড় চোর বানাতে পেরেছেন। লন্ডনে বসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক যা বলছে, তা মুখে আনতেও ঘৃণা হয়।’
জিয়া পরিবার ইতিহাস বিকৃত করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ইতিহাস বিকৃত করেছে, খালেদা জিয়াও করেছে; এখন তার পুত্রও একই কাজ করছে। তার কথায় ইয়াহিয়া খানের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায়।’
তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এক-এগারোর সময়ে রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল, তারাই এখন বড় বড় কথা শোনাচ্ছে, মিথ্যাচার করছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ম্যাট্রিক পাস করে সেনাবাহিনীতে ঢুকেছিল। তার স্ত্রী তো ম্যাট্রিক ফেল। তার সন্তানদের কথা আর নাই-বা বললাম। সুতরাং তাদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না।’
জিয়া পরিবারের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন মারা গেল তখন বলা হলো, তার ভাঙা সুটকেস ছাড়া আর কিছু নেই। জিয়াউর রহমানের পুরনো প্যান্ট কেটে খালেদা জিয়া তারেক-কোকোর প্যান্ট বানিয়ে দিতেন। এরপর তাদের এত কিছু এলো কী করে? এত সম্পদ কিভাবে হলো?’
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বক্তব্য দেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
পাগলের প্রলাপ : তোফায়েল
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের কটূক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা কটূক্তি করে, তারা রাজনীতি করার যোগ্য নয়। উনি কিছুদিন পর পর কথা ছাড়ছেন। অর্বাচীনের মতো কথা বলেন। এগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এসেছি, এখন তো আর ওটা লাগে না। তাই যা খুশি তাই বলেন।’
গতকাল বুধবার ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা।
স্মৃতিচারণা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান মাঝেমধ্যে বঙ্গবন্ধুর কাছে যেতেন; কিন্তু খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেতেন না। তাই বঙ্গবন্ধু তাঁকে খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেন। খালেদা ও জিয়াকে এক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এমনই মহান নেতা ছিলেন তিনি। এখন উল্টো প্রতিশোধ নিতে তারেক রহমান অর্বাচীনের মতো কথা বলছেন। এসব লোক রাজনীতি করার উপযুক্ত নন।’
জীবন্ত উন্মাদ : গাফ্ফার চৌধুরী
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, ‘তারেক রহমান একজন জীবন্ত উন্মাদ। তাঁকে অর্ধ উন্মাদ বললেও সম্মান করা হবে। এই উন্মাদ অবস্থাতেই তাঁর শেষ পরিণতি ঘটবে।’
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের মতবিনিময় সভায় গাফ্ফার চৌধুরী এসব কথা বলেন।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, ‘তারেক রহমান বীরত্বের সঙ্গে দেশে চেহারা দেখাতে পারেন না। জামায়াতের লোক নিয়ে তিনি লাখ পাউন্ড খরচ করে বিদেশে সভা করেন। আর পালিয়ে বেড়ান। তিনি চিৎকার করতে থাকুন। তাঁর চিৎকারে বঙ্গবন্ধুর কিছু হবে না।’
তারেককে উকিল নোটিশ
লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উকিল নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। নোটিশটি গতকাল বুধবার রেজিস্ট্রীকৃত ডাকে তারেকের মা খালেদা জিয়ার বাসা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায় পাঠানো হয়।
নোটিশে তারেককে বক্তব্য প্রত্যাহার করে সাত দিনের মধ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। অন্যথায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পরও আপনার মধ্যে রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও ইতিহাসের জ্ঞান নেই।’
বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলার মধ্যে দিয়ে তারেক গর্হিত কাজ করেছেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার লন্ডনে বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ আখ্যা দেন।