চট্রগ্রাম: চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আসলামের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের রশিদ পাড়ার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই এই গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে সাংবাদিক সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী র্মূশিদা বেগম অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ইউএনও আবু আসলাম রাত ৮টার দিকে হঠাৎ পুলিশ নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। এরপর ইউনএনও সরাসরি বেডরুমে ঢুকে সাংবাদিক সেলিমকে অস্ত্র তাক করে পুলিশকে বলে-‘শালাকে অ্যারেস্ট কর, তাকে গুলি করে মারব আমি’। ওই সময় অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে ইউএনও আবু আসলাম।’
লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের একটি মামলায় সাংবাদিক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। সেই পরোয়ানা মূলে আজ (শুক্রবার) তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা কোনো আসামি গ্রেফতারকালে ইউএনও উপস্থিত থাকতে হয় কি না জানতে চাইলে ওসি কোনো কথা না বলেই বিষয়টি এড়িয়ে যান।
র্মূশিদা বেগম বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে হঠাৎ পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। ওই সময় ইউএনও আবু আসলাম একজন এসআই ও কিছু বখাটে যুবককে নিয়ে ঘরে ঢুকেই সরাসরি বেড রুমে ঢুকে যান। সে সময় সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন ল্যাপটপে নিউজ লিখছিলেন। সেখানে গিয়েই ইউএনও কোমর থেকে অস্ত্র বের করে সেলিম উদ্দিনের দিকে তাক করে হুংকার দিয়ে বলেন, ‘শালাকে অ্যারেস্ট কর, তাকে গুলি করে মারব আমি’। এরপর পুলিশ তাকে হাতকড়া লাগিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়। কোনো ধরনের কথা বলার সুযোগ দেয়নি, কী অপরাধের জন্য এভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে তাও কিছু জানতে দেয়নি।’
তিনি আরো বলেন, কয়েক দিন আগে পূর্ব বিরোধের জেরে উপজেলার মামলা চলমান একটি পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যান ইউএনও। সেই বিষয়ে যুগান্তরে নিউজ করেছেন সাংবাদিক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এর পর দুই দিন আগে লোহাগাড়ায় গৃহায়ন কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে নিউজ করেছিলেন। সরকারি বরাদ্দ এক লাখ ২০ হাজার টাকার স্থলে মাত্র ৫০/৬০ হাজার টাকায় ঘর নির্মাণ করে অর্থ লুটের খবর প্রকাশ করায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছেন।
ইতিপূর্বে আর কখনও আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতারের জন্য পুলিশের সাথে অভিয়ানে গিয়েছিন কি না জানতে চাইলে ইউএনও মোহাম্মদ আবু আসলাম প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পরে তিনি বলেন, ‘একজন ম্যাজিস্ট্রেট যেকোনো সময় যেকোনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেন। পুলিশ অভিযানে ছিল, ওই মুহুর্তে আমিও সেই এলাকায় ছিলাম। তাই পুলিশের সাথে গিয়ে একজন পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছি।’
ইউএনও পরে আবার বলেন, ‘আমার সাথে ওর সাথে ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল, তাই গ্রেফতার করা হয়েছে।’