পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেছেন, সুন্দরবনের ভেতরে তেলের ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া তেল সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান যে মব্য করেছেন তা ‘অলীক’। তিনি বলেছেন, এ ঘটনা সুন্দরবনের ওপর দীর্ঘ প্রভাব ফেলবে।
উপমন্ত্রী আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়টি অনুধাবন করেই প্রধানমন্ত্রী ওই ঘাসিয়াখালী চ্যানেল চালুর নির্দেশ দিয়েছেন। এ চ্যানেল উদ্ধারের জন্য ওই এলাকার চিংড়ির ঘেরগুলো স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। ঘাষিয়াখালী চ্যানেল চালু হলে নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হবে। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনেই তিনি ওইদিন ব্যক্তিগতভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তেল অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি বনবিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দিক নির্দেশনা দেন। সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধানের জন্য প্রধান বন সংরক্ষককে সুন্দরবনে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ ট্যাঙ্কার ডুবির পর পরই বিশেষ ধরনের লিকুইড ব্যবহারের বিষয়ে বার বার কথা বলছিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী। আর এ কারণে তেল অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়। সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর একটি স্থানে এ ধরনের লিকুইড ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ।
আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব মনে করেন, প্রথম দিকেই তেল অপসারণে স্থানীয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে তেলের বিস্তার অনেকটাই ঠেকানো যেতো। বন সংলগ্ন সাধারণ মানুষকে আরো আগেভাগে কাজে নামাতে গেলে ক্ষতির পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, তেল ৬০/৭০ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে যাওয়ার পরে সাধারণ মানুষকে কাজে লাগানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের ওপর মারাÍক প্রভাব পড়েছে। যেখানে ট্যাঙ্কারটি ডুবেছে সেখানে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতী ডলফিনের অভয়াশ্রম। দুর্ঘটনার পর ৩/৪ দিন সেখানে ডলফিন দেখা যায়নি। কাঁকড়া, ছোট মাছ, কুমিরসহ নানা জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এই তেল ছড়িয়ে পড়ায় জোয়ারে বনের ভেতরে, নদী উপকূলের চরে লেগে গেছে। যা সুন্দরীগাছের শ্বাসমূলে আটকে গাছগুলোর শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি করেছে। প্রাণীজ ক্ষতিগুলো এখনই দেখা গেলেও উদ্ভিদের ক্ষতি হবে দীর্ঘমেয়াদী, যা দীর্ঘদিন পরে দেখা দেবে।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ করে বলেন, আমরা কমিটি গঠন করেছি। বন বিভাগের উদ্যোগে ৫০০ নৌকা কাজে লাগানো হয়েছে। সরকার সংগ্রহকৃত তেলের ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন সরকার গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।