মৌলভীবাজারে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার মাঠ-ঘাট, পথে-প্রান্তরে, বাড়ির আঙিনা, হাওর-বাওর সর্বত্রই এখন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। তবে ফলন ভালো হলেও ধানের মূল্য নিয়ে হতাশ কৃষকরা। এ বছর সরকার ধান না কিনে চাল কিনছে। এক মণ ধানে ভাঙালে চাল পাওয়া যায় ২৬-২৭ কেজি। এই হিসেবে ধান ও চালের মধ্যে দামের কমবেশি রয়েছে। কৃষকরা মনে করছেন, ধান ভেঙে চাল তৈরি করে বিক্রির চেয়ে ধান শুকিয়ে বিক্রি করলে তাঁরা উপকৃত হবেন।
জেলা কৃষি অফিসের দাবি, জেলায় বাম্পার ফলন হওয়ায় জমির প্রকারভেদে বিঘাপ্রতি রোপা আমনের ফলন হয়েছে ১৩ থেকে ১৬ মণ। ধানের ফলন দেখে কৃষকরা খুশি হলেও সরকার ধান না কিনে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। স্থানীয় বাজার, আড়ৎ এবং দোকানগুলোতে শুকনো ধান মণপ্রতি ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মল্লিক সরাই গ্রামের কৃষক সাচ্চু মিয়া ও মিয়াধন মিয়া জানান, “বর্গা হিসেবে ৯ বিঘা জমিতে সার, বীজ, কামলা খরচ দিয়ে আমরা যে ধান পেয়েছি- সরকার যদি সেই ধানই কিনে নিতো তাহলে হয়তো পুষিয়ে যেতো। কিন্তু সরকার চাল কেনাতে আমরা প্রকৃত মূল্য পাবো না।” গুজারাই গ্রামের এখলাছুর রহমান সোহেল জানান, “ফলন ভালোই হয়েছিলো কিন্তু স্থানীয় বাজারের যে দাম রয়েছে তাতে ন্যায্য দামতো মিলছেই না উপরন্তু লোকসান গুণতে হবে।”
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় ১৮১০০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ১৪৯৭৭ হেক্টর, রাজনগরে ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর, কমলগঞ্জে ১৬ হাজার ৯৯০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর, বড়লেখায় ৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও জুরীতে ৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ধান ফলন হয়েছে। সব মিলিয়ে সাত উপজেলায় এবার ৯৯ হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমি থেকে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৯৯১ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ফলন ভাল হওয়ায় আরও তিন শতাংশ বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, প্রতিমণ ধান থেকে ২৬-২৭ কেজি চাল পাওয়া যাবে। আর সরকার প্রতি কেজি চাল ৩২ টাকা দর হিসেবে সারা জেলা থেকে ১৫৫ মেট্রিকটন চাল কিনবে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী জানান, “ধান কিনে রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণেই সরকার চাল কিনছে। কৃষকরা কৃষি উপকরণ বাবদ যে খরচ করেছেন তা পুষিয়ে উঠবে কারণ এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে।”