বিশ্বব্যাপী অবৈধ আয় ও অর্থপাচার বাড়ছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। সম্প্রতি দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থপাচার হয়েছে, যা এ দেশগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অবৈধ বাণিজ্যের বিষয়টি স্পষ্ট করে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এ সংস্থা জানায়, ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক দশকে বিশ্বে প্রতিবছর অবৈধ অর্থপাচারে প্রবৃদ্ধি এসেছে ৯.৪ শতাংশ হারে, যা বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দ্বিগুণ। সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়েছে ওই সব দেশগুলো থেকে যাদের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। ২০১২ সালে উন্নয়নশীল যে দেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয় এতে শীর্ষ দশের মধ্যে- চীন থেকে পাচার হয় ২৪৯.৫৭ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া থেকে ১২২.৮৬ বিলিয়ন ডলার, ভারত থেকে ৯৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার, মেক্সিকো থেকে ৫৯.৬৬ বিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ৪৮.৯৩ বিলিয়ন ডলার, সৌদি আরব থেকে ৪৬.৫৩ বিলিয়ন ডলার, থাইল্যান্ড থেকে ৩৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার, ব্রাজিল থেকে ৩৩.৯৩ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২৯.১৩ বিলিয়ন ডলার এবং কোস্টারিকা থেকে ২১.৫৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান দেশগুলো থেকে মোট বহির্মুখী অবৈধ অর্থ প্রবাহ ছিল ৯৯১.২ বিলিয়ন ডলার, যা এ দেশগুলোর বিদেশি বিনিয়োগ ও সহায়তা আয়ের সমষ্টির চেয়েও বেশি। এ ছাড়া গত এক দশকে শুধু চীন থেকেই বছরে অর্থের বহির্মুখী প্রবাহ ছিল প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার করে। গবেষণার অন্যতম সহকারী অর্থনীতিবিদ জোশেফ স্পেঞ্জার্স বলেন, ২০১২ সালে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থক্ষরণ হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলার। যে অর্থ স্থানীয় ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা অথবা অবকাঠামোতে বিনিয়োগ হতে পারত। এ অর্থ সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারত এবং বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো এক দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে অর্থ পাচার হয়েছে ৬.৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৪ শতাংশের সমান। অর্থপাচারের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং সাবসাহারা আফ্রিকা অঞ্চল। দেশগুলো থেকে অর্থপাচারের মূল মাধ্যম ছিল বাণিজ্যিক লেনদেন। আমদানি বা রপ্তানির ছলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে অর্থ বাইরে পাচার করা সম্ভব হয়েছে। জিএফআই এর মতে, প্রত্যেক দেশের আলাদা প্রচেষ্টার পাশাপাশি জাতিসংঘকে অবৈধ অর্থপাচার মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ তা না হলে বিশ্বে দারিদ্র্য কমানো যেমন কঠিন হবে তেমনি প্রবৃদ্ধি জোরালো করাও সহজ হবে না।
জিএফআই প্রেসিডেন্ট রেমন্ড বেকার বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বিশ্বনেতারা যদি মুখোমুখি না বসেন তবে টেকসই বিশ্ব উন্নয়ন অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের উচিত হবে ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে আগামী বছরই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। এটি করতে হবে টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার অধীনে।’
-এএফপি।