বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। আইনি মারপ্যাঁচে তার এই কারাবন্দিত্ব আরো দীর্ঘায়িত হবে, নাকি সহসা তিনি মুক্তি পাবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্য দিকে নির্বাচনী ডামাডালে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মসূচিহীন অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে ফের সোচ্চার হতে কেন্দ্রের প্রতি নানাভাবে আহ্বান জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি আবারো জোরালো করতে নতুন কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই শান্তিপূর্ণ কিছু প্রতিবাদী কর্মসূচি দেয়া হতে পারে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। কারাগারে থাকা অবস্থায় এই মামলায় উচ্চ আদালত তার সাজা আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আরেকটি মামলায় তার সাজা হয়েছে সাত বছর। যে মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন, সেটিতে গ্রেফতারের দেড় মাসের মাথায় জামিন মিললেও তার মুক্তির পথে বাদ সেধেছে আরো ৩৫ মামলা। একটি মামলায় জামিন হলে, অন্য মামলা সামনে আসছে। এভাবেই পার হতে চলেছে এক বছর। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, যে মামলায় বেগম জিয়া কারাভোগ করছেন, সেই মামলায় তিনি জামিন পাওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে দীর্ঘসময় ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলোও জামিনযোগ্য বলে জানান তারা।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কেবল সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হতে পারছেন না। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।
বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর থেকে তার মুক্তির জন্য বিএনপি মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, স্মারকলিপি দেয়ার মতো শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছিল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। নির্বাচনের পরে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, সারাদেশে তাদের বহু নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন। অনেকে কারারুদ্ধ। গণতন্ত্রের জন্য যিনি স্বাধীন, সার্বভৌম পতাকা নিয়ে যুদ্ধ করছেন তাকেও আজ প্রায় এক বছর অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য আইনি লড়াই যেমন চলবে, তেমনি সাংগঠনিক কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক থেকে ইতোমধ্যে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। এর অর্থ হচ্ছে আসন্ন উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না দলটি। নেতারা বলেছেন, এখন তারা গুরুত্ব দেবেন দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়টিকে। একই সাথে সংগঠন শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হবে। বিএনপির অভ্যন্তরে কেউ কেউ আগামী মার্চে কাউন্সিল করার কথা তুললেও, বেগম জিয়া কারাগারে থাকায় তা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে শীর্ষপর্যায়ে আলোচনা করে নেতৃত্বের কিছু অদল-বদল করা হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলার সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, বিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন, কিন্তু আইন নিজস্ব গতিপথে চলতে পারছে না। অদৃশ্য শক্তি খালেদা জিয়ার মুক্তির লাগাম ধরেছে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি চরম অস্বস্তিকর সময় পার করছে। প্রহসনের নির্বাচনের পর তার মুক্তির দাবিতে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সোচ্চার হতে চান। শীর্ষ নেতারা অবশ্যই এই আবেগ ধারণ করে শিগগিরই কর্মসূচি দেবেন।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, বিএনপির সংসদে যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হতে পারে। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে বারবার বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত বদলের অনুরোধ জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংখ্যায় কম হলেও বিএনপির বিজয়ীদের সংসদে যাওয়া উচিত। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তাদের দলের কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না।