বিগত কয়েক বছর আলু উৎপাদনে বেশ চমক দেখিয়েছে শেরপুরের কৃষকরা। বারবার বাম্পার ফলন হলেও আলুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আলু উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। লোকসান গুনতে গুনতে কেউ কেউ ঋণের দায়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ীঘর ছেড়েছে। ফলে আলু উৎপাদনে তাদের মধ্যে আগ্রহ দিনদিন কমছে ।
সরকারের কৃষি বিভাগের তথ্য মতে শেরপুর জেলার সব উপজেলায় কমবেশী আলুর চাষ হয়। তবে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশী আলুর উৎপাদন হয়ে থাকে। তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৪ হাজার ৯৮০ জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এর আগে, ১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫ হাজার ২০০ হেক্টর , ১৬-১৭ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৩৫ হেক্টর, ১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়।
কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতের সঙ্গে অনেক আলু চাষি একমত না হয়ে বলেছেন বড়বড় আলু চাষি লোকসানের ভয়ে আর আলু চাষ করছেন না। ২০১৫ সালের পর থেকে ক্রমাগত লোকসান হওয়ায় আলু উৎপাদনে অনেকটা ভাটা পড়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে এ বছর যে পরিমাণ জমিতে আলু উৎপাদন দেখানো হয়েছে তা বাস্তবতার সাথে মিল নেই। বাস্তবে আলু লাগানো জমির পরিমাণ আরও অনেক কম হবে।
কৃষকরা জানিয়েছে, এখানের জমি আলু উৎপাদনে বেশ উপযোগী বলে কয়েক বছর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোটা পূঁজির লোকেরা শেরপুরের হাজার হাজার হেক্টর জমি ভাড়া নিয়ে আলু উৎপাদন করত।
বেশ কয়েক বছর লোকসানের ফলে পূঁজিওয়ালা আর আসে না।
সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার সাহেদ আলী জানিয়েছে, লোকসান গুনতে গুনতে এখন আর আলুচাষে আমাদের মন নেই। ঋণের দায়ে কেউ কেউ এলাকা ছাড়া হয়েছে।
শেরপুর চরাঞ্চলের আলু চাষি হারুণ উস শহীদ জানিয়েছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে কম জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশী আলুর চাষ হয় চরাঞ্চলে। এই চরাঞ্চলেই গত বছরের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ কম জমিতে চাষিরা আলু রুপন করেছে। কারণ হিসেবে ওই কৃষক জানিয়েছে, ক্রমাগত লোকসান।
শেরপুরের একমাত্র পাবলিক হিমাগার তাজ কোল ষ্টোরেজের পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছে, জেলার বেশী ভাগ আলু চাষিই আমার হিমাগারেই আলু সংরক্ষণ করে। এ পর্যন্ত কৃষকরা যে তথ্য দিয়েছে তাতে চলতি বছর আলুর উৎপাদন অনেক কম হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছে, আলু চাষ কমেনি সহনীয় মাত্রায় আছে। তবে আলু বিদেশে রপ্তানী করতে পারলে কৃষক আলুর আরও ভাল দাম পেতো এবং আলু চাষে কৃষকরা আরও মনোযোগী হতো।