হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ মেয়েলী কন্ঠ আর ধর্মীয় বাঁধার কারনই নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে লালমনিরহাটের মুসলিম কলেজ ছাত্রীর প্রেমিক স্বপন চন্দ্র (২৪)।
বুধবার (১৬ জানুয়ারী) বিকেলে লালমনিরহাট সদর থানায় প্রেস ব্রিফিং করে হত্যার মুল রহস্য তুলে ধরেন পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারী) সকালে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কিসামত বিদ্যাবাগিশ এলাকার বিনোদ চন্দ্রের ছেলে স্বপন চন্দ্রের মরদেহ বাড়ির অদুরে ফসলি জমি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতে নিহতের ভাই গোবিন্দ চন্দ্র বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
প্রেস ব্রিফিং এ লিখিত বক্তব্যে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, ক্লু লেস এ হত্যার মুলে ছিল অসম প্রেম ও মেয়েলী কন্ঠ। নিহত যুবক মেয়েলী কন্ঠে কথা বলতে পারত। এতেই শেষ নয়, তার মিষ্টি কন্ঠে প্রেমে পড়ে যায় প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য আনছার আলীর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে(১৮)। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথম দিকে শাসন গর্জন করেও কোন সুফল আসেনি।
হিন্দু ছেলে হয়ে মুসলিম মেয়ের সাথে সম্পর্ক কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি মেয়ের পরিবার।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সহযোগিদের সহায়তায় ৭ জানুয়ারী সন্ধ্যায় স্বপনকে ডেকে নিয়ে গালমন্দ করেন আনছার আলী। এরপর রাতে আনছার আলীসহ ৫জন মিলে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থল ফসলী জমিতে নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে প্রেমিক স্বপন চন্দ্রকে হত্যা করে।
নিজেদের বাঁচতে ও হত্যার রহস্য গোপন করতে ঘাতক আনছার আলী কৌশলে পুলিশকে প্রথম দিকে বিভ্রান্তমুলক তথ্য দিয়ে আসছিল।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ অসম প্রেমের সুত্রধর ধরে পুলিশ প্রধান ঘাতক আনছার আলী (৫০) ও তার স্ত্রী ওমিজা বেগমকে (৪২) গত রোববার (১৩ জানুয়ারী) রাতে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের সহযোগি আসামীদের নামসহ হত্যার রহস্য বেড়িয়ে আসে।
পরদিন তাদের সহযোগি প্রতিবেশী মৃত জহর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মজিদ ওরফে উড়ি মজিদ (৪৮), মনছার আলীর ছেলে মাহাবুবার রহমান (৩৯) ও মৃত ঝাপারু চন্দ্রের ছেলে নরেশ চন্দ্র রায়কে (৪২) গ্রেফতার করেন তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারী) এ হত্যা মামলার ৫ আসামীকে আদালতে হাজির করা হলে তারা জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
ক্লু লেস হত্যা মামলার রহস্য এক সপ্তাহের মধ্যে উৎঘাটনসহ আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় এবং হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাপাতিটিও জব্দ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার অভিযোগপত্রও খুব দ্রুত আদালতে দাখিল করা হবে বলেও প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোজাম্মেল হক।