নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদলের এক ইউপি মেম্বারের অনুসারীকে আটক করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে এক পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ পুলিশসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। পুলিশ বহনকারী দু’টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল ও প্রচুর ফাঁকা গুলি ছুড়ে। বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ঘটনাস্থলে। সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। ঘটনটি ঘটেছে শনিবার রাতে বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
নিহত শ্রমিকের নাম আশিকুর রহমান (২৫)। তিনি মদনপুরের প্যানডেক্স গার্মেন্টের শ্রমিক ও একই এলাকার মদনপুরের চানপুর এলাকার শহীদুল ইসলামের ছেলে।
নিহতের পরিবারের লোকজন বলছেন, আশিকুর রহমান বিকালে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর সন্ধ্যায় বাজার করতে গেলে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে প্রাণ হারান।
জানা গেছে, বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদলের আমির হোসেন ও খলিলুর রহমান খলিল মেম্বার গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে গত ১৮ই নভেম্বরও দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শনিবার সন্ধ্যায় মদনপুর এলাকার ড্রিমল্যান্ড নামের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে নূর নবী ও রিফাত নামের দুই যুবককে আটক করা হয়। তারা মূলত খলিল মেম্বারের লোক। এ খবর স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তখন খলিল মেম্বারের লোকজন এসে পুলিশকে ঘিরে ফেলে। তারা আটক দু’জনকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। তখন পুলিশ বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা শুরু হয়। ওই সময়ে আমির হোসেনের লোকজন পুলিশের পক্ষ নিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৭টায় মদনপুর এলাকার প্রভাবশালী ইউপি মেম্বার খলিলুর রহমান ও তার পক্ষের লোকজনও পুলিশকে ধাওয়া করলে পুলিশ পাল্টা অ্যাকশনে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ার সেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল। সংঘর্ষ চলাকালে দুই গ্রুপের মাঝে পড়ে গার্মেন্ট শ্রমিক আশিকুর রহমান মারা যায়।
এছাড়া সংঘর্ষে পুলিশের এস আই মোহাম্মদ আলী, কনস্টেবল দেবাশীষ, মোহন আহত হয়। এবং স্থানীয় অন্তত আরো ৪০ থেকে থেকে ৪৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বাবু নামের এক যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত ৯টায় অতিরিক্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বন্দর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন শ্রমিক মারা গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে। তবে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।