নেত্রকোনা শহরের প্রাণ মগড়া নদী। নদীটিকে দখল-দূষণ থেকে মুক্ত ও খনন করতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন এবং নেত্রকোনাবাসীর ব্যানারে ‘নদী বাঁচাও’ আন্দোলন করে আসছে।
জেলা প্রশাসনের চাপে পানি উন্নয়ন বোর্ড উদ্যোগ নেয় বলে জানা যায়। কিন্তু নেত্রকোনা সেচ বিভাগ কর্তৃক মাত্র ৬ কিলোমিটার ‘ছোট মগড়া খাল’ নামে খনন প্রকল্প পাশ হয়ে যায়। যে কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে দ্বৈত নাম হওয়ায় প্রকল্পটি পাশ হচ্ছে না। এদিকে সেচ বিভাগ বলছে, খাল আর নদী এক নয়। তারা কোন নদীর নামে প্রকল্প আনেনি। এসব টালবাহানায় ভেস্তে যেতে বসেছে মগড়া নদীকে দখলমুক্ত করে খনন কার্যক্রম। এদিকে জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, নদীকে রক্ষায় নতুন করে পরিকল্পনা নেয়ার কাজ চলছে।
বারসিকের নদী গবেষক মো. অহিদুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী মগড়া নদীকে ঘিরেই আজকের জেলা শহর নেত্রকোনা। কিন্তু কালের আবর্তনে নদীর দুপাড় দখল দূষণের কবলে পড়ে অনেকটাই নিশ্ছিন্ন হওয়ার পথে।
জেলা শহরকে ঘিরে রাখা মগড়া নদীটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৪৮ কিলোমিটার। এরমাঝে পৌর শহরকে ঘিরে রেখেছ নদীটির মাত্র ৬ কিলো অংশ। নদীটির উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ পর্যন্ত তীরবর্তী ৮৪টি গ্রামে বসবাস করছে সাধারণ মানুষসহ লক্ষাধিক কৃষক। এর মধ্যে ৯১২টি জেলে পরিবার এখন পেশা হারিয়ে পথে নেমেছে।
আন্দোলনকারী সামাজিক সংগঠনের নেতা শিক্ষক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে নদীটিকে রক্ষায় নদী বাঁচাও আন্দোলন হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড দখল দূষণমুক্ত করে সৌন্দয্য বর্ধনে প্রকল্প কার্যক্রম হাতে নেয়। অন্যদিকে সংগঠনগুলোর আন্দোলন দেখে জেলা সেচ বিভাগ থেকে সদর উপজেলার কাইলাটি এলাকায় (ছোট মগড়া খাল) নামে মাত্র ৬ কি.মি এলাকার খনন প্রকল্প পাশ করিয়ে ফেলে। কিন্তু তাদের খনন কাজ দু’দিনেই ভরাট হয়ে যায়। এটি তারা লুটপাটের জন্য করেছে। আমরা নদীটিকে বাঁচাতে প্রয়োজনে আরও কঠিন আন্দোলন করবো। নদীকে মরতে দেয়া যাবে না।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান বলেন, সেচ বিভাগ ছোট মগড়া খাল নামে প্রজেক্ট আনায় দ্বৈত নাম হওয়ায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মগড়া নদীর খনন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়নি। তবে আমরা চাই নদীটি ড্রেজার দিয়ে খননের মাধ্যমে নান্দনিক একটি নদীতে পরিণত হোক। এর জন্য আমরা পুনরায় চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে নেত্রকোনা বিএডিসি রিজিয়ন (ক্ষুদ্রসেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, মগড়া নদীর নামে কোন প্রকল্পই দেয়া হয়নি। আমরা খাল খননেন কাজ করে থাকি। আমরা তাদেরকে বাধা দিচ্ছি না। তারা কাজ করতে চাইলে ওইটাও করতে পারেবে।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, শুধু একই নামের কারণেই প্রত্যাশিত প্রকল্পটির অনুমোদন হয়নি। তবে আবারো নতুন করে প্রকল্পের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। নদীটি শহরের প্রাণ। আমরা দখল মুক্ত করতেও ইতিমধ্যে হাতে কাজ নিয়েছি।