ঢাকা: নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিচ্ছে কাল। টানা তৃতীয় মেয়াদে মন্ত্রিসভা গঠনের দিকে তাই চোখ সবার। মন্ত্রিসভায় কি চমক আসছে, কে থাকছেন আর কে বাদ পড়ছেন- এ আলোচনা দেশজুড়ে।
দলীয় সূত্র বলছে, পুরনো মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ছেন বেশ কয়েকজন সদস্য। তাদের জায়গায় স্থান পাবেন নতুন মুখ। আর নতুন মন্ত্রিসভার কলেবরও বাড়ছে আগের মন্ত্রিসভা থেকে। পরিচ্ছন্ন ইমেজের দক্ষ নেতাদের তুলে আনা হবে মন্ত্রিসভায়। অর্থ, পররাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাবেন তারাই হতে পারেন মহাজোট সরকারের বড় চমক।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এটাও হতে পারে আরেকটি চমক। এবার দুই ধাপে মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। আগামীকাল নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শপথ পড়াবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এর আগে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ হাসিনাকে শপথ পড়াবেন তিনি। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ ও শপথ পাঠ করানোর এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের। গতকাল রাতেই মন্ত্রিসভা শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে পৌঁছে দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এছাড়া সারা দিন নানা জল্পনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের হাতে দেননি। তাই তিনি সম্ভাব্য মন্ত্রীদের কাছে ফোন করে মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারেননি। এদিকে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪। তাদের মধ্যে ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৮ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী।
এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরো পাঁচজন। যদিও ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ১২ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান হয়। ওইদিন ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। এরপর দুই দফা অন্তর্ভুক্তি শেষে এ সংখ্যা ৫৪ জনে দাঁড়ায়। এছাড়া সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে ২৪ জন মন্ত্রী ও আটজন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবশ্য পরে কয়েক দফা সমপ্রসারণে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ জনে। গত শুক্রবার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার কেন যেন মনে হয় নতুন মন্ত্রিসভায় বিশাল একটা চমক আসবে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের পথ চলা। তাই বিশাল জয়ের সঙ্গে বিশাল চমকও থাকতে পারে। তবে কেবিনেট গঠনের বিষয়টা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এখানে অন্য কারো প্রবেশের সুযোগ নেই। এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের চমকের ঘোষণার পর নবনির্বাচিত এমপিদের প্রত্যাশাটা বেড়ে গেছে। তারা মন্ত্রী হিসেবে নাম লেখাতে চান। এ জন্য দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন নানাভাবে। অন্যদিকে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। এমপিরা তাদের নাম ‘মন্ত্রী তালিকা’য় আছে কি না নানাভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কেউ কেউ গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। জানার চেষ্টা করছেন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে কারা কারা থাকছেন।
প্রেসিডেন্টকে কার্ড দিয়ে দাওয়াত শুরু: প্রেসিডেন্টকে দিয়ে দাওয়াত কার্ড বিতরণ শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল মাগরিবের নামাজের পর বঙ্গভবনে যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর কার্ড পৌঁছে দেন। কার্ড দিয়ে দরবার হলে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। এদিকে বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভা বৈঠকের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা অনুযায়ী কার্ড তৈরি করা হয়েছে। আজ সারাদিন এসব কার্ড বিলি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কয়েকটি টিম। বিভিন্ন দূতাবাসের কার্ডগুলো আজ সকাল থেকে পাঠানো শুরু হবে। যদিও মেইল মারফত নিমন্ত্রণের বিষয়টি বিদেশি বিভিন্ন মিশন ও দূতাবাসকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের সংখ্যা এবার ৭৫০ জনে রাখতে চায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেই অনুযায়ী কাজ করছেন তারা।
ছুটির দিনে কাজে ব্যস্ত ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ: মন্ত্রিসভা গঠনে দাপ্তরিক কাজ থাকায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে গতকাল ছুটির দিনেও ব্যস্ত ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিন প্রায় সবগুলো দপ্তর খোলা ছিল। শপথের জন্য আমন্ত্রণ ও নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন নিয়ে কাজ করছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা। কয়েক দফা মিটিংও করেছেন তারা। এর আগে শুক্রবারও খোলা ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এদিকে মন্ত্রিসভার শপথ নিয়ে দেশজুড়ে আছে নানা আলোচনা। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কর্মী-সমর্থকরা তাকিয়ে আছেন কারা কারা স্থান পাচ্ছেন মন্ত্রিসভায়। বড় জয়ের পর মন্ত্রিসভায় কি ধরনের চমক থাকছে তা দেখতে দেশবাসীও তাকিয়ে আছেন বঙ্গভবনের দিকে।