ঢাকা:এমপিরা শপথ নেবেন আজ। তার পরেই গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিপরিষদ। কারা থাকছেন, কারা যোগ হচ্ছেন মন্ত্রিসভায়? এ নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। সোস্যাল মিডিয়াতে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই শিরোনামে স্ট্যাটাসের ঝড় বইছে। ওদিকে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার শপথকে ঘিরে বঙ্গভবনের দরবার হল ধোয়ামোছার কাজ চলছে। ফুল ও বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধনের গাছপালা পরিচর্যা করা হচ্ছে। শপথ নিয়ে গতকাল ও আজ বঙ্গভবনের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক হয়। এ বৈঠকে শপথের খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার মন্ত্রিসভা শপথে এক হাজার অতিথি উপস্থিত থাকতে পারেন।
যদিও বঙ্গভবন দরবার হলের ধারণক্ষমতা ৭৫০ জন। মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের বাড়তি অতিথি নেয়া থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হবে। দুইজনের বেশি যাতে বঙ্গভবনে নিয়ে না যান- এমনটা বলা হবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সু-নজরে থাকার চেষ্টা করছেন দলটির অনেক নেতা। গত তিনদিন ধরে সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে দেখা করেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এদিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে এখন আলোচনা মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাচ্ছেন কারা? মন্ত্রিসভায় এখন আছেন এমন কেউ নিজেদের ইচ্ছার কথা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে প্রকাশ করছেন। গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অসাধ্য সাধন করবে। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে আশা করছি, আগামী ৫ বছরেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু বললে আমি না করি না।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন করে দায়িত্ব না পেলে কে হতে পারেন অর্থমন্ত্রী এনিয়ে আলোচনায় আছে বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের নাম। তবে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণমন্ত্রী করার কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কেউ যদি দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে পরিবর্তন হতে পারে। এসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা তাদের দায়িত্ব বেশ আস্থার সঙ্গে সামলিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। তবে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের পরিবর্তন নাও হতে পারে। অসুস্থতার কারণে মন্ত্রিপরিষদে স্থান নাও পেতে পারেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আগের মতো এ মন্ত্রণালয়টি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকবে। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে বেশ কয়েক জনকে এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া হচ্ছে না। বর্তমান মন্ত্রিসভায় তারা বেশ ভালো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও নতুন মন্ত্রিসভায় তারা ছিটকে পড়বেন- এটা অনেকটা নিশ্চিত। এ তালিকায় আছে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী এবং সাবেক ধর্মমন্ত্রীর নাম। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত জিএম কাদের মন্ত্রী হতে পারেন। এ ছাড়া পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা পূর্ণমন্ত্রী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের একজন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হতে পারেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের একজন হতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী।
এমপিদের শপথ আজ: একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত এমপিদের শপথ আজ। বেলা ১১টায় সংসদ সচিবালয়ের শপথকক্ষে তারা শপথ নেবেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। তার আগে তিনি নিজে আইনসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এবারও তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে স্পিকার গতকাল মানবজমিনকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত এমপিদের শপথবাক্য পাঠ করানো হবে। এজন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, রেওয়াজ অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সদস্যরাই প্রথমে শপথ নেবেন। এরপর ক্রমানুসারে শপথ নেবেন অন্যরা। শপথ শেষে নতুন সংসদ সদস্যরা সংসদ সচিবের কার্যালয়ের স্বাক্ষর খাতায় সই করবেন এবং একসঙ্গে তাদের ছবি তোলা হবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচিতদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট তৈরি করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজি প্রেসে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। ২৯৮ জনকে নির্বাচিত ঘোষণার ওই গেজেট প্রকাশ হলে তাদের শপথের আয়োজন করতে বুধবার সকালে সংসদ সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় ইসি।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে বা স্পিকারকে অবহিত না করলে সদস্য পদ খারিজ হবে। দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে গত রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। গোলযোগের কারণে একটি আসন স্থগিত রেখে ওইদিন রাতেই ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২৫৯টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সাতটি আসনে জয়ী হয়েছেন। তারা শপথ নেবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।