ষ্টাফ করেসপনডেন্ট
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
গাজীপুর অফিস: মঙ্গলবার ভোররাতে নিজ বাসায় খুন হওয়ায় রেজিষ্ট্রি অফিসের নকলনবীশ শহিদুল আলমের স্ত্রী রহিমা আক্তার বুবলি স্বামী নৃশংসভাবে খুনের পর এ সব কথা বলেন।
মঙ্গলবার নিহতের বাসায় গিয়ে দেখো যায় কান্নার রুল পড়ে গেছে। শহিদুলের ১ ছেলে ও মেয়ে। বাবা ফজলুল হক মোল্লাহ ৬ সন্তানের পিতা। ৪ ছেলে ও মেয়ের মধ্যে শহিদুল আলম তৃতীয়।
ফজলুল হক মোল্লা জানালেন, ১৯৯৬ সালে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে তিনি কাপাসিয়ায় থেকে গাজীপুর শহরে রাজদীঘীর পাড়ে এই জমি ক্রয় করেন। ছেলে নকলনবীশের চাকুরীর মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে গেলো দুই বছরে ছয় তলা বাড়ি নির্মান করেছেন। সোমবার রাতে নীচ তলায় অবস্থান করলেও তৃতীয় তলায় ছেলে খুনের কোন খবর তিনি বলতে পারেন না।
নিহতের ভাই ইসমাইল জানান, ছয় তলার মধ্যে ১ম তলায় শহীদুলের প্রাইভেট গাড়ি ও বাড়ির কর্মচারীরা থাকেন। ২য় তলায় শহিদুলের ভাই ইসমাইল বসবাস করেন। একই প্ল্যাটের অন্য ইউনিটে থাকেন একজন স্কুল শিক্ষক। তৃতীয় তলার উত্তর পাশে জয়দেবপুর থানার বর্তমান উপ-পরিদর্শক(এসআই) হারিছ উদ্দিন ও দক্ষিপাশে নিহত শহিদুল আলম থাকতেন। বাসাটির ৫ম তলায় (সাবেক গাজীপুর বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলায় কর্মরত)উপ-পরিদর্শক(এসআই) সুজায়েত হোসেন ও ৬ষ্ঠ তলায় জয়দেবপুর থানার বর্তমান উপ-পরিদর্শক(এসআই) মুফতি মাহমুদ ভাড়ায় বসবাস করেন।
খুনের পর আটক হওয়া বাড়ির দারোয়ান নজরুল ইসলাম জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির মালিক শহিদুলের বন্ধু হাসিব ও কালা মোক্তার তার কাছে বাসার গেটের চাবি চায়। চাবি না দিয়ে তিনি বালিশের নীচে চাবি রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে নজরুলের স্ত্রীর নিকট থেকে হাসিব ও মোক্তার চাবি নিয়ে যায়।
নজরুল আরো জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থল তৃতীয় তলায় বসবাসকারী জয়দেবপুর থানার এসআই হারিছ বাসায় আসেন। তিনি মোক্তারের নিকট থেকে চাবি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন।
নিহতের স্ত্রী রহিমা আক্তার বুবলি জানায়, তার স্বামী ড্রইংরুমে বসে প্রায়ই দরজা বন্ধ করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। আর তিনি তার রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমাতেন। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার বুবলি ছেলে মেয়ে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাহারাদারের স্ত্রীর ফোনে স্বামীর ঘরের দরজা বন্ধ বলে জানতে পারেন। অতঃপর সাড়ে ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার হয়। তবে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে স্বামীর ঘরের দরজা বন্ধ দেখেছেন বলে জানান নিহতের স্ত্রী। বুবলি আক্তার।
বুবলি আরো জানায়, তাদের ছয় তলার বাড়িতে তিন জন দারোগা ভাড়া থাকেন। সোমবার ভোররাতে হারিছ উদ্দিন নামে একজন দারোগা বাসায় আসেন। কিন্তু তখনো খুনের সংবাদ হয়নি। বুবলি জানায়, স্বামী ড্রইংরুমে প্রায়ই অন্য থানায় কর্মরত অপর একজন দারোগা নিয়ে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। তবে তার নাম জানা গেলেও তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা উচিত হবে না বলে জানান পুলিশ।
ঘটনাস্থলের আশপাশের প্রতিবেশীরা জানায়, অল্প সময়ে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাওয়ায় সারদিনই সরকারী বেসরকারী লোকজন শহীদুলের বাসায় আসতেন। অনেক রাত পর্যন্ত শহীদুলের ড্রইংরুমে আড্ডা হতো। দারোগা পুলিশ আসা-যাওয়া ও ওই বাসায় ভাড়ায় বসবাস করার কারণে কেউ মুখ খোলতে সাহস পাইনি।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, নিহত শহীদুল আলম মাদক ব্যবসা ও জমির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো। গাজীপুর শহরের হাক্কানী হাউজিং এ জনৈক বাবুর সঙ্গে তার বিরোধ ছিলো। সূত্র আরো জানায়, হত্যাকন্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এবং বাদীপক্ষ যাদের সন্দেহ করছেন তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে ধারনা করা হচ্ছে। খুনের ঘটনা পূর্ব বিরোধের জেরে সংঘটিত হয়েছে তবে জমি সংক্রান্ত না মাদক সংক্রান্ত তা জানতে আরো সময় লাগবে।
মঙ্গলবার ভোররাতে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিপরীতে রাজপুকুর পাড়ে নিজের ৬তলা বাসার ৩য় তলায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশ নকলনবীশ সমিতির সাবেক সভাপতি শহিদুল আলম(৩৬)।
এই ঘটনায় ৫জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মিলন, হাসিবুর রহমান, কালা মুক্তার, বাসার পাহাড়াদার নজরুল ইসলাম ও নজরুলের স্ত্রী।
নিহতের পিতার নাম ফজলুল হক মোল্লা। স্থায়ী বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার তিলশুনিয়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে গাজীপুর জেলা শহরের রাজদীঘীর পাড়ে বসবাস করছেন। গাজীপুর সদর উপজেলার সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে তিনি নকলনবীশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
লাশের পাশে থাকা নিহতের বন্ধু মোঃ সোবাহান জানান, ভোররাতে কে কা কারা তয় তলায় প্রবেশ করে শহিদুল আলমকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে। দুর্বৃত্তরা নিহতের বাম চোখ উপড়ে নিয়ে গেছে এবং মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। লাশের দেহের বিভিন্ন অংশে অসংখ্যা ধারালো ছোঁড়ার আঘাত রয়েছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে আনে।
গাজীপুর সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লিখক মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, ১৯৯৬ সালে কাপাসিয়া থেকে শহিদুল গাজীপুরে এসে সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে নকল নবীশ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি নকল নবীশ সমিতির গাজীপুর জেলার সাবেক সভাপতি।
স্থানীয়রা জানান, অল্প সময়ে শহীদুল আলম অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। নিজে ৬তলা বাড়ি করেছেন। তিনি নকলনবীশের পাশাপাশি জায়গা-জমির ব্যবস করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সামাজিকভাবে বিতর্কিত ও অবৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত শহিদুলের বাসায় তিন জন দারোগা কেন ভাড়ায় আসলেন তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি কেউ।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন জানান, ৫জনকে জিঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।