ঢাকা:আগামী ৩রা জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত নতুন সংসদ সদস্য (এমপি)দের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। এমপিদের শপথ পড়াবেন স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী। এই তারিখ চূড়ান্ত করেই প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এমপিদের শপথের পর ৫ বা ৬ই জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হতে পারে। ওই ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জাতীয় সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকালে বা কাল সকালের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট নোটিফিকেশন জারি করবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়টি সংসদ সচিবালয়কে জানিয়েছে তারা। তাই ৩রা জানুয়ারি এমপিদের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য সব রকম আয়োজন চলছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খান বলেন, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের শপথ পড়ানো হবে। গেজেট কাল (আজ) বা পরশু (আগামীকাল) হলে ৩ বা ৪ঠা জানুয়ারি শপথ অনুষ্ঠান হবে। ওইভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে বিপুল ভোটে জয়ের কারণে নিয়ম অনুযায়ী টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ জন্য কাজ শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এখন উৎসুক সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, পুরনোদের মধ্যে কারা থাকছেন, আবার নতুন করেই বা কারা আসছেন, কে পাচ্ছেন কোন্ দপ্তর- এমন নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ বা ৬ই জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে। ওইভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গেজেট জারির পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা প্রেসিডেন্টের কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি চাইবেন। প্রেসিডেন্ট অনুমতি দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন। সংসদ সদস্যদের শপথের আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ পড়াবেন। এরপর মন্ত্রিসভার সদস্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ পড়াবেন। এরপরই দপ্তর বণ্টন করে আদেশ জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে দশভাগের ৯ ভাগ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ দশভাগের এক ভাগ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য মনোনীত (টেকনোক্র্যাট) হতে পারবেন বলে ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতীয়মান হবে প্রেসিডেন্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন বলেও সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (বিধি ও সেবা) শফিউল আজিম মানবজমিনকে বলেন, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সময় প্রতিবার যেভাবে হয় এবারও তাই হবে। এরপরও প্রিপারেশনের বিষয় তো আছেই। সেটা আমরা শুরু করে দিয়েছি। যখন নতুনরা শপথ নেবেন তখন অটোমেটিক্যালি এ মন্ত্রিসভা থাকবে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচিত এমপি বা অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সাধারণত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। ওই অনুযায়ী বঙ্গভবনের শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর (পরিবহন পুল) থেকে গাড়ি নিয়ে শপথের জন্য অপেক্ষমাণ মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে পাঠানোর কাজটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূচারুভাবে করে থাকেন। এ ছাড়া রেওয়াজ অনুযায়ী বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শপথ অনুষ্ঠানের সব কার্যক্রম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই পরিচালনা করে থাকেন। মন্ত্রিসভায় শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছে- এটা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন তাদেরই জায়গা হবে নতুন মন্ত্রিসভায়। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ই জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ সদস্যে। এর মধ্যে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন।