নির্বাচন প্রত্যাখ্যান বিএনপির: প্রার্থীদের নিয়ে ইসিতে স্মারকলিপি দেবে ঐক্যফ্রন্ট

Slider রাজনীতি


ঢাকা: নির্বাচন পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেছে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট। গতকাল বিকালে ধারাবাহিকভাবে এ বৈঠকের পর রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার নির্বাচন বাতিল দাবি করে সব প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেয়া হবে। অন্যদিকে, নির্বাচন পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ না নেয়ারও ইঙ্গিত দেন নেতারা। বিকালে দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, আমরা এই ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে পুরোপুরি বর্জন করেছি। অনতিবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে আর কখনো দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। এই নির্বাচন প্রমাণ করে ২০১৪ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ঠিক ছিল। আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে, এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচনটা করতে হবে। এই সব কিছু তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। নির্বাচনের আগের দিন রাতেই তারা অর্ধেক ভোট দিয়েছে। নির্বাচনের দিন সকালে কিছু ভোট দিয়েছে। আর যখন ভোটাররা কেন্দ্রে আসা শুরু করে তখন তারা বাকি ভোটগুলো দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ৭ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তারা শপথ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরাতো নির্বাচন বর্জন করেছিই। নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা বাজে এবং নজিরবিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা (সরকার) ব্যবহার করেছে। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সকল প্রশাসন সরকারের পক্ষে কাজ করেছে। যা একবারে নজিরবিহীন এবং দুঃখজনক। অতীতে কোনো নির্বাচনে এমন বাজে ঘটনা দেখা যায়নি। একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে নির্বাচনের তিন চার দিন আগে থেকেই গ্রেপ্তার এবং একটা ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। তারা মূলত টার্গেট করেছে আমাদের যারা নেতা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার এবং কেন্দ্রভিত্তিক এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা। আর সেটা তারা করেছে। আর কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন আমাদের ভোটারদের ভোট দিতে সাহায্য না করে উল্টো তাদের ভোটকেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমার আসনে প্রায় দশটি স্থানে তারা গুলি করেছে। ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, পুনরায় নির্বাচন সম্ভব নয়। এ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারতো একজন ঘৃণিত এবং নিকৃষ্ট ব্যক্তি। আপনারা জানেন, প্রথম থেকে তার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে আসছিলাম আমরা। তিনি একজন দলীয় ব্যক্তি, তার সমস্ত কার্যকলাপ ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। উনি যেভাবে কথা বলেন তাতে সম্পূর্ণভাবে সরকার যে কথা বলতে চায় তার প্রতিধ্বনি করেন। তিনি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার কাছে কোনো আবেদন নিয়ে গিয়ে লাভ নেই। ফখরুল বলেন, নতুন ভোটাররা এবার সবচাইতে বেশি বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের যে অধিকার, সেই অধিকার তারা প্রয়োগ করতে পারেননি। নির্বাচনের পরেও সরকারি দলের লোকেরা বিএনপির নেতাকার্মীদের উপর হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, নির্বাচনের পরেও তাদের সহিংসতা বন্ধ হয়নি। কাল রাত থেকে সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক যারা আসার কথা ছিল, তাদের ভিসা দেয়া হয় নাই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাইলে মাত্র দুজনকে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মূল পর্যবেক্ষকদের আসতে না দিয়ে তারা এই প্রহসনের ভোটকে আড়ালে এবং গোপন রাখতে চেয়েছে।

আমাদের অনেকে প্রশ্ন করেছেন এত কিছুর পরও আমরা কেন নির্বাচনে গেলাম? তখনও বলেছি, এখনও স্পষ্ট করে বলছি, আমরা গণতন্ত্র বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচন করে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা নির্বাচনে গিয়েছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলে এসেছি, আপনি একটা পরিবেশ তৈরি করুন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন। আপনারা জানেন যে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের কাছে গিয়েছিলাম নির্বাচনের একটা পরিবেশ তৈরি করতে। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেননি।
গত একমাসে আমাদের প্রায় ২৭ হাজারেরও বেশি নেতকার্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি তাদের অবিলম্বে মুক্তি এবং সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

অনেক আগ থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে গিয়েছে। নির্বাচনে এমন ফলের পর নতুন কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে। সেটা পরে জানানো হবে।

সব প্রার্থী নিয়ে ইসিতে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট: নির্বাচন বাতিলের দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। আগামী বৃহস্পতিবার সব প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে ইসিতে স্মারকলিপি দেবে ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল রাতে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে যে প্রহসনমূলক নাটক মঞ্চস্থ হলো, সমগ্র জাতি তা প্রত্যক্ষ দেখেছেন এবং হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন। এই কথিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারকে বিজয়ী দেখালেও প্রকারান্তরে হেরেছে বাংলাদেশ ও এদেশের ১৭ কোটি মানুষ। এর মধ্যদিয়ে কবর রচিত হয়েছে আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের। সার্বিক দিক বিবেচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। এই নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব প্রার্থীসহ নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *