‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকালীন দল বটে তবে মুক্তিযুদ্ধের দল নয়’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এ দলের অধিকাংশ নেতাই মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ নেননি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিব এখন আওয়ামী লীগের লালসালু। এই লালসালুকে ঘিরে থাকা ভণ্ডরাই নিজেদের স্বার্থে যাকে তাকে রাজাকার আখ্যা দেয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার ও আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে তাদের দল নাকি মুক্তিযুদ্ধের দল অথচ চোরের দল চাটার দল আখ্যা দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এমন একটি কাজ করার জন্য তাহলেতো শেখ মুজিবই বড় রাজাকার।
বাংলাদেশের ৪৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপির আট দিনের অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিনে সোমবার ইস্ট লন্ডনের দ্যা অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের উপঅধিনায়ক সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান একে খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন তাকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে কি বাংলাদেশের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি?
তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতাকামী জনগণের ওপর হামলার আগ পর্যন্ত ইয়াহইয়া খানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাকামী জনগণ তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ নস্যাত করে দিয়েছিলো।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবকে জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই ইতিহাস বিকৃতির শুরু।
তারেক বলেন, বিজয় দিবসের শুভলগ্নে স্মরণ করছি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে এম ফজলুল হকসহ সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থের পক্ষে সদা সোচ্চার ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, বাকশালের জনক শেখ মুজিবুর রহমানকেও স্মরণ করছি যিনি পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, যদিও জনগণ স্বায়ত্বশাসন নয় চেয়েছিলো স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মাওলানা ভাসানী, যিনি স্বায়ত্বশাসন নয় চেয়েছিলেন স্বাধীনতা। তবে মাওলানা ভাষানীই প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার আওয়াজ তুলেছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, স্মরণ করছি তাজউদ্দিন আহমদ, জেনারেল ওসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য শহীদ এবং যারা ৫৬ হাজার বর্গমাইল এলাকার ভেতরে থেকে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে লড়াই করেছেন শত্রুর সঙ্গে।
শহীদ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাচিত হিসেবেও প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করে তারেক রহমান বলেন, শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, জিয়াউর রহমানও বালাদেশের স্বাধীনতার জন্য সেই তরুণ বয়স থেকেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রেখেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে জিয়াউর রহমানের একটি লেখা থেকেও উদ্ধৃতি তুলে ধরেন। নিবন্ধে জিয়াউর রহমান লিখেছেন ..“স্কুল জীবন থেকেই পাকিস্তানীদের দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতা আমার মনকে পীড়া দিতো। আমি জানতাম, অন্তর দিয়ে ওরা আমাদের ঘৃণা করে।—বাঙালিদের বিরুদ্ধে একটা ঘৃণার বীজ উপ্ত করে দেওয়া হতো স্কুল ছাত্রদের শিশু মনেই।—সেই স্কুল জীবন থেকে মনে মনে আমার একটা আকাঙ্ক্ষাই লালিত হতো, যদি কখনো দিন আসে, তাহলে এই পাকিস্তানবাদের অস্তিত্বেই আমি আঘাত হানবো..পাকিস্তানি পশুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার, দুর্বারতম আকাঙ্ক্ষা দুর্বার হয়ে উঠতো মাঝে মাঝেই। উদগ্র কামনা জাগতো পাকিস্তানের ভিত্তি ভূমিটাকে তছনছ করে দিতে। কিন্তু উপযুক্ত সময় আর উপযুক্ত স্থানের অপেক্ষায় দমন করতাম সেই আকাঙ্ক্ষাকে ”।
তিনি বলেন, “এই কারণেই দেখা যায়, শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হলেও যথাসময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে জিয়াউর রহমানের কোনো সমস্যা হয়নি।”
তারেক রহমান বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই, বাকস্বাধীনতা নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই মানুষ গুম হচ্ছে খুন হচ্ছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে এসব গুম খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা জড়িয়ে পড়েছেন। দুর্নীতি লুটপাট এখন সর্বগ্রাসী। জনগণের হাজার হাজার টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। র্যা ব নামের রক্ষীবাহিনীর বন্দুকের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন রংহেডেড শেখ হাসিনা। এই দখলদার হাসিনার অবৈধ সরকারের অবৈধ মন্ত্রীদের অতিকথনে জনগণ অতিষ্ঠ। খোদ শেখ হাসিনার মুখে নোংরা ও অশ্লীল কথাবার্তা জাতি হিসেবে প্রায়ই জনগণকে লজ্জায় পড়তে হয়।
তারেক রহমান বলেন, একটার পর একটা অপকর্ম করে রংহেডেড শেখ হাসিনা বিপদে পড়লেই জনগণকে ধোঁকা দিতে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করেন।
তারেক বলেন, শেখ মুজিব কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে নয় আন্দোলন করেছিলেন পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য। শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি বলেই সুযোগ পেয়েও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।
তারেক রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে শেখ মুজিবকে ‘পাকবন্ধু’ বলায় কি ভুল হয়েছে? তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিবকে ‘পাকবন্ধু’ বলায় আওয়ামী লীগের নাকি সম্মানহানি হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ। সভায় আরো বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী মীর নাসির, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রহুল কবির রিজভী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান প্রমুখ।