দিনে দুপুরে চিতাবাঘ তুলে নিয়ে গেল পাঁচ বছরের শিশুকে। বুধবার বিকেলে এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে ভারতের আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটের ধুমচিপাড়া চা-বাগানের বারো নম্বর সেকশন লাগোয়া শ্রমিক মহল্লায়।
ডুয়ার্সের চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকার কয়েকটি অঞ্চলে চিতাবাঘের আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। এলাকাবাসীর দাবি, এসব এলাকায় ‘নরখাদক’ চিতাবাঘের দেখা মিলেছে।
এবার সেখান থেকেই চিতাবাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল ইডেন নায়েক (৫) নামের এক শিশুর। তখন সে তার দিদি অনুষ্কার সঙ্গে বাড়ির উঠানে খেলায় মত্ত ছিল। সবার নজর এড়িয়ে আচমকাই ওই চিতাবাঘ গর্দান কামড়ে ধরে ওই শিশুপুত্রকে চাগাছের ঝোপের আড়ালে টেনে নিয়ে যায়। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে চিতাবাঘের আক্রমণে মৃত্যু হওয়ার এটা দ্বিতীয় ঘটনা।
এদিন শিশুটির আর্তচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এলেও শেষরক্ষা হয়নি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর বাগানের সাড়ে তিনশো মিটার গভীর থেকে উদ্ধার হয় ইডেনের ঘাড় মটকানো নিথর দেহ। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে স্থানীয় মাদারিহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ বছরই জলপাইগুড়ির মাল ব্লকের বেতগুড়ি চা-বাগানে চিতাবাঘ একই কায়দায় এক মহিলা শ্রমিককে তুলে নিয়ে অর্ধেক খেয়ে ফেলেছিল।
শিশুর বোন ১০ বছরের আনুশকা নায়েক জানিয়েছে, ‘‘স্কুল ছুটি থাকায় আমি আর ভাই বাড়ির উঠোনে খেলছিলাম। কিছু বোঝার আগেই বাঘটি ভাইকে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এতটুকু শব্দ করেনি। ভাই খুব চিৎকার করছিল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। চোখের সামনে ভাই চলে গেল। এখন আমি কার সঙ্গে খেলব?” বলতে বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠে ওই বালিকা।
মা প্রেমিকা নায়েক ঘটনার পর থেকেই বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। কাঁদতে কাঁদতে বাবা কুনাল নায়েক জানালেন, “কালকেই সোয়েটার কিনে দেওয়ার কথা ছিল। আর বায়না করবে না। ”
ঘটনা জানাজানি হতেই মারাত্মক উত্তেজনা ছড়ায় ধুমচিপাড়া চা বাগানজুড়ে। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দফতরও। কারণ, ইতোপূর্বে চা-বাগানের মধ্যে মাঝে মাঝে চিতাবাঘ হামলা চালালেও প্রকাশ্য দিবালোকে আস্ত একটা মানুষকে চিতাবাঘ তুলে নিয়ে যাওয়ার নজির নেই বন দফতরের খাতায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি মৃত শিশুর পরিবারকে চার লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে।