ঢাকা: পুুলিশের সবকটি রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), সকল ইউনিট প্রধান ও পুলিশ সুপারদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে। ওইদিন বিকেলে পুুলিশ সদর দফতরে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পুুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ নির্দেশনা দেবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে বৃহস্পতিবার এই বৈঠক হবে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করতে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সংখ্যা ৫ জন। ওই কমিটির কাজ তদারকি করবেন আইজিপি ডক্টর মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও এডিশনাল আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান।
পুলিশ সূত্র জানায়, নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘যেকোনো মূল্যে’ স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নির্দেশনা দিচ্ছে পুলিশ সদর দফতর। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে ব্লক রেইড ও চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে গ্রেফতার অভিযান আরো জোরালো করা হবে। বিশেষ নির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল ইউনিটের প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার ও উপ-পুলিশ কমিশনারদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে নির্বাচনক কমিশনে সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে নির্বাচন কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থা, বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময়ে কোনো এলাকা বা কেন্দ্রে কারা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তালিকাটি তৈরি করা হয়। এতে প্রায় দুই লাখ ব্যক্তির নাম রয়েছে। মূলত কোনো ভোট কেন্দ্রে কারা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ সব দলের লোকই আছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সদর দফতরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার মূলত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা হবে। এতে পুলিশ সকল ইউনিটের প্রধান, সকল রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোকমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারদের ডাকা হয়েছে। বিকেলে আইজিপি স্যার তাদের নিয়ে বিশেষ একটি বৈঠক করবেন। ওই বৈঠক থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হবে। তাছাড়া তাদেরকে নির্বাচনকালীন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। যেকোনো মূল্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা কৌশল নেয়া হবে। একটি মহল দেশের পরিস্থিতি অবনতি করার পায়তারা করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। ওই মহলটিকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশের নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা মনিটরিং সেলের অন্যতম এক সদস্য বলেন, বেশ কিছু দিন আগে থেকেই আমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কোন এলাকায় কারা ভোট কেন্দ্র দখল ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে তারও একটি তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে।
তিনি আরো বলেন, ‘জননিরাপত্তা দেয়া পুলিশের রুটিন কাজ। এর বাইরে বড় উৎসব বা যেকোনো প্রয়োজনে পুলিশ জনসাধারণের নিরাপত্তা দেয়। নির্বাচন যেহেতু বড় একটি উৎসব। এই সময়ে বিভিন্ন গ্রুপ সক্রিয় থাকে। তারা পরস্পরের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে যাতে আইন-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটাতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গ্রেফতার অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। গতকালও সারাদেশে দুই শতাধিক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মী বেশি বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ বলছে বিএনপি নেতাকর্মী নয় বরং বিভিন্ন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত ও সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা কোন দলের সেটি দেখা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সময় কোন জেলায় কী ধরনের সমস্যা হতে পারে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্বাচন সময়ে বিভিন্ন সুযোগ সন্ধানী ও সন্ত্রাসী গ্রুপ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালানোর চেষ্টা করে। এই সময়ে কেউ যাতে নির্বাচনী পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে।