আগামী নির্বাচনকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হওয়ার জোরালো টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটির হাইকমান্ড। তারই অংশ হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে কোনোভাবেই নির্বাচনী মাঠে দাঁড়াতে না দেয়ার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীনেরা। ইতোমধ্যে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
দলটির নেতারা মনে করেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি জোট জ্বালাও-পোড়াও করেছে। হরতাল-অবরোধ ডেকে দেশে বড় ধরনের একটা অচলাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বিএনপি কখনো চায় না উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। তারা মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা চালালে কোনো বাধা দেয়া হবে না। তবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে চাইলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করা হবে। আওয়ামী লীগের বিভিন্নপর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বর্জন করেছিল তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি না মানার কারণে। সেই দাবি তো এবারো সরকার আমলে নেয়নি। আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশীদারিত্বমূলক হোকÑ এটা চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ড. কামাল হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ঘরানার বড় বড় নেতাদের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছিল চিন্তার বাইরে। যার ফলে শুরুতেই কিছুটা অস্বস্তি ও চাপ ছিল। এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পুরো নির্বাচনীপ্রক্রিয়া শেষ করে প্রচার-প্রচারণার মাঠে নামতে যাচ্ছে। এটিকে মোকাবেলা করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে কিছুটা রাজনৈতিক কৌশল আওয়ামী লীগ হাতে নেবে এটা তো স্বাভাবিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যেকোনো মূল্যে নির্বাচনী মাঠ দখলে রেখে সুফল ঘরে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষের পথে। আসনভিত্তিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা টিম গঠন করা হচ্ছে। সেখানে যুক্ত করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের এবং সরকার সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে দেশের আলোচিত বরেণ্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী তারা নির্বাচনীকার্যক্রম পরিচালনা করছে। আজ বুধবার আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধি জিয়ারত করবেন। এর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হচ্ছে। তবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা অনানুষ্ঠানিকভাবে আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
এদিকে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ চায় না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকুক। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারো ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় সরকার। তারই আলামতের অংশ হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বাধা দেয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নিজের নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালানোর সময় হামলার শিকার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বগুড়া-৫ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ গণসংযোগে বের হলে তার গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। নড়াইল-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এনপিপির চেয়ারমান এ জেড এম ড. ফরিদুজ্জামানের লোহাগড়া বাজার এলাকার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ। ড. ফরিদুজ্জামান জানান, লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের নির্বাচনী অফিসে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে অফিসের চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এ রকম সারা দেশে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের গাড়িবহরে এভাবে আরো হামলা চালানোর আশঙ্কা করছে বিএনপি।
তবে বিএনপির প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি বলেছেন, বিএনপির প্রচার-প্রচারণায় কোনো রকম বাধা দেয়া হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে মিথ্যাচার করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের পক্ষে অভূতপূর্ব গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের জনগণ নৌকায় ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।
এদিকে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে কি না জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকÑ সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। সংসদ বহাল রেখে কি নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়! তবে নির্বাচন কমিশন যদি সাহসিকতার সাথে কাজ করে তাহলে কিছুটা হলেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়। তার ওতো কোনো আলামত দেখছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলা- এটা অশনি সংকেত। নির্বাচনীপ্রক্রিয়া ভেঙে গেছে। এই হামলার ঘটনা তারই প্রতিফলন।