ঢাকা: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির সদস্যরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাঁরা যতবার নির্বাচন কমিশনে গেছেন, ততবার সেখানে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ‘হুমকি-ধমকি’ দিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন পছন্দ না হলে তাঁদের রাজনৈতিক দলের কর্মী বলে ‘ট্যাগ’ দিয়েছেন। সাংবাদিকদের লিস্ট করে তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
আজ শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করেন; যদিও অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি এবং যাচাই করা যায়নি।
রুহুল কবির রিজভীর ভাষ্য, ‘আগামী রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বাসায় ইসি বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে রোববার রাত আটটায় ১ নম্বর হেয়ার রোডের বাসভবনে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মতবিনিময়ের নামে মূলত গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন এইচ টি ইমাম। এমনিতে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে নির্বাচন কমিশন কঠোর বিধিমালা জারি করেছে। তাতেও আশ্বস্ত না হতে পেরে এখন গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে তারা (সরকার) মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘এইচ টি ইমাম নিয়মিত নির্বাচন কমিশনে যান এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এমনকি তিনি নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।’
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তারা ‘আইনবহির্ভূতভাবে’, ‘অন্যায়ভাবে’ বিএনপি চেয়ারপারসনের তিনটি মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এটা সরকারের ‘ষড়যন্ত্রেরই’ অংশ। তিনটি আসনে তাঁর পক্ষে আপিল করা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে খালেদা জিয়া প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। নির্বাচন কমিশনকে খালেদা জিয়ার প্রতি ন্যায়বিচার করার আহ্বান জানান রিজভী। ইসি সংবিধান ও আইন অনুসরণ করলে এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্বাসযোগ্য সিদ্ধান্ত নিলে খালেদা জিয়া অবশ্যই প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে একটি ‘বিশাল প্রহসন’।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অভিযোগ করে রিজভী বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও ‘বেপরোয়া’ হয়ে উঠেছে। সারা দেশে গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলার হিড়িকে নেতা-কর্মীদের জীবন বিপন্ন ও বিপর্যস্ত। কোনো মামলা ছাড়াই অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। তাঁদের এলাকাছাড়া করা হচ্ছে, ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ‘গুম-খুন-অপহরণ’ করা হচ্ছে। এর দায় নিতে হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে। কেননা, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা এই দেশ এবং এই সমাজেরই মানুষ। কেন আপনারা সরকারের স্বার্থে মনুষ্যত্বহীন কাজে নিজেদের জড়ান? আপনারা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল, মত, বিশ্বাসে মানুষের ওপর সহিংস নিষ্ঠুরতা কীভাবে অবলীলায় চালাতে পারেন? এরাও এই দেশেরই মানুষ। আপনারা কি নিশ্চিত যে আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য ক্ষমতায় থাকবে? আপনারা কিসের লোভে গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা, মানুষের জীবন ও নিরাপত্তাকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না? আপনাদের আহ্বান জানাই, অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে আপনারা মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেবেন না। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সহায়তা করুন। নিজ দেশের নাগরিকদের গুম-খুনে নিজেদের হাতকে রঞ্জিত করবেন না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন।’
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান রিজভী।