ঢাকা:রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শাখা প্রধান এবং এক শ্রেণিশিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র্যাব ও পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজ বুধবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় র্যাবের মহাপরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারকে চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ জানায়।
এর আগে দুপুরে এই ঘটনায় গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ওই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিনাত আখতার এবং অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার অশোভন আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অরিত্রীর বাবা-মার সঙ্গে অধ্যক্ষ ও শাখা প্রধানের নির্মম, নির্দয় আচরণ অরিত্রীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। এ জন্য কমিটি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
এ ছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ওই তিনজনকে বরখাস্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডকে পৃথক চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশরাফ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আজই পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে ওই তিনজনকে বরখাস্ত করা হবে।
এ ছাড়াও এই তিনজনের বেতন-ভাতা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাঁদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেওয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।
অরিত্রীদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসকেরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।
অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা এই ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেন। আজও সকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের শাখার প্রধান ফটকে বিক্ষোভ শুরু করেছে কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অনেক অভিভাবক।