কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: ভায়রা ভাইয়ের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিতে এসে জীবন দিতে হয়েছে কল মিন্ত্রী আয়নলের। সে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়নি। তাকে ট্রেনে কেটে মারা হয়েছে বলে আয়নলের ভায়রা শহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে তার পরিবারের স্বজনরা। আয়নলকে যেকোনো স্থানে মেরে তাকে রেললাইনে ফেলে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে সেই নাটক সাজিয়েছে ভায়রা শহিদ বলে নিহত পরিবারের স্বজনরা অভিযোগ করেন। কালীগঞ্জ আড়িখোলা রেলওয়ের মোড়ল বাড়ি সংলগ্ন বুধবার রাতে ট্রেনে কাটা পড়া আয়নল হক (৪৭) নামে কল মিন্ত্রীর খন্ডিত লাশ নরসিংদী জিআরপি থানার পুলিশ উদ্ধার করার পর থেকে আয়নলের পরিবার দাবি করে আসছে আয়নল ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়নি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। নিহত আয়নল হক কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মোহানী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দুবাই থেকে ছুটি নিয়ে দেশে এসে আয়নলের স্ত্রী কুহিনুর বেগমও তার স্বামীকে বড় বোন জামাই শহিদ হত্যা করেছে বলে সে দাবি করেন। তার বড় বোন জামাইয়ের কাছ থেকে পাওনা ৫০ হাজার টাকা আনতে গেলে দুলাভাই কৌশলে তার স্বামীকে হত্যা করেছে। স্বামীর হত্যাকারী দুলাভাই শহিদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে সে জানায়।
এই সংক্রান্ত বিষয়ে শনিবার নরসিংদী জিআরপি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহ আলমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে যদি আসে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আয়নলের স্বজনরা মামলা করতে চাইলে তখন মামলা নেয়া হবে। এর আগে মামলা নিতে পারছি না। ময়না তদন্তের রির্পোট আসতে প্রায় দুই মাস সময় লাগতে পারে।
সরেজমিনে নিহত আয়নলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ি ভরা স্বজন ও প্রতিবেশি নারী-পুরুষ। নিহত আয়নলে ছোট ভাই কাজল মিয়া বলেন, আয়নল আর শহিদ দুইজন ভায়রা ভাই। দুইজনের স্ত্রী বিদেশ থাকে। আয়নলের স্ত্রী কুহিনুর বেগম থাকেন দুবাই আর শহিদের স্ত্রী থাকেন জর্ডানে। পারিবারিকভাবে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। শহিদের মেয়ে শাহিদা বেগম তার স্বামীর বাড়িতে নতুন ঘর করার জন্য কিছুদিন আগে ছোট খালা অর্থাৎ আয়নলের স্ত্রীর নিকট ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। সেই টাকার জন্য আয়নল গত সোমবার শাহিদাকে ফোন দেয়। মঙ্গলবার শাহিদা তার বাবার কাছে টাকা দিয়ে দিবে বলে তার খালু আয়নলকে জানায়। পরে শাহিদা তার বাবার কাছে টাকা পাঠিয়ে দেয় খালুকে দেবার জন্য। শহিদ তার মেয়ের নিকট থেকে টাকা এনে তার ভায়রাকে টাকা না দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়নল তার ভায়রা শহিদকে ফোন দিলে টাকা নেয়ার জন্য তাকে তার বাড়িতে আসতে বলে। টাকা আনতে যাওয়ার পর থেকে ভাইয়ের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি এবং তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। বুধবার রাতে তার ভাইয়ের খন্ডিত লাশ কালীগঞ্জ আড়িখোলা রেলওয়ের মোড়ল বাড়ি সংলগ্ন স্থানে পড়ে রয়েছে বলে তারা জানতে পেরে সেখানে যায়।
যেই অটোরিকশা যোগে আয়নল তার বাড়ি মোহানী থেকে ভায়রার বাড়ির উদ্দেশ্যে এসেছে সেই অটোরিকশা চালক নবীর হোসেন জানায় , মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়নলকে নিয়ে সে বালীগাঁও মোড়ল মার্কেটে আসে। তাকে যাত্রী ছাউনিতে বসিয়ে রেখে ভায়রা শহিদ আয়নলকে নিয়ে রেললাইন পেরিয়ে উত্তর পাশের চায়ের দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যায়। দেড় ঘন্টা পর সে আয়নলের মোবাইলে ফোন দিলে মোবাইলটি বন্ধ পায়। এর কিছুক্ষণ পর শহিদ এসে আয়নলের যেতে দেরি হবে তাকে ভাড়া ১২০ টাকা দেয় এবং চলে যেতে বলে। আয়নল এখন কোথায় শহিদকে এমন প্রশ্ন করলে শহিদ জানায় আয়নল তার কাছে ৫০ হাজার টাকা পাওনা তার কাছে ২০ হাজার টাকা আছে, বাকি ৩০হাজার টাকা তার এক বন্ধু নিয়ে আসতেছে। তাই তার যেতে দেরি হবে। তখন নবীর আয়নলের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার মোবাইলের সুইচ বন্ধ পায়। তখন সে চলে আসে।
স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দুবাই থেকে ৭ দিনের ছুটি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আয়নলের স্ত্রী কুহিনুর বেগম দেশে আসে। কান্নাজড়িত কন্ঠে স্ত্রী কুহিনুর বেগম বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে তার স্বামীর সাথে তার কথা হয়। এর পর থেকে তার একাধিক নম্বরে ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া না গেলে সে তার ভাইকে ফোন দেয়। তার ভাই বলে আয়নলের শারিরীক অবস্থা ভালো না হাসপাতালে আছে। তখন সে বুঝতে পারে কিছু খারাপ ঘটনা ঘটেছে। তার বড় বোনের স্বামী শহিদ পাওনা টাকা না দেয়ার জন্য আয়নলকে রেললাইনে নিয়ে হত্যা করেছে।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামে অভিযুক্ত শহিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার ঘরে তালা ঝুলছে। অভিযুক্ত শহিদের বড় ভাই মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, সে চার দিন ধরে বাড়িতে নেই । আয়নলের মৃত্যুর পর থেকে তারা ভীতুসন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে বলেও শহিদের বড় ভাই জানান।
ঘটনার পরে শহিদ তার প্রবাসী স্ত্রী নিলুফার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে শহিদের স্ত্রী বলে,তুমিই আয়নলকে হত্যা করেছো । স্ত্রীর এমন কথার প্রেক্ষিতে অপরপ্রান্ত থেকে শহিদ বলে, আয়নল আমার কাছে এসে চলে যায়। পরে কি হয়েছে তা সে জানে না। এমন কথোপকথনের রেকর্ড নিহত আয়নলের স্বজনদের নিকট শহিদের স্ত্রী নিলুফা পাঠায় বলে জানা যায়। অভিযুক্ত শহিদ হোসেন কালীগঞ্জ পৌরসভার বালীগাঁও এলাকার মৃত মজু মিয়ার ছেলে।