ঢাকা: নির্বাচনের দিন ভোটে বাধা দিলে সবাই দাঁড়িয়ে তা রক্ষা করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, ৩০ তারিখের নির্বাচন পাহারা দিতে হবে জনগণকেই। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন বিধিমালার বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন এসব বিষয় নিয়ে প্রয়োজনে আদালতে যাবে ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও হয়নি দাবি করে ড. কামাল হোসেন বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার বিনীত নিবেদন আপনারা কষ্ট করে নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। পাড়া-প্রতিবেশী সকলকে নিয়ে ভোট দিতে যাবেন। প্রত্যেক বাড়িতে যত ভোটার আছে সবাইকে নিয়ে ভোট দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এতে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ দেশ ও সরকারের ওপর তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ঐক্যফ্রন্টের সব দলই এ ব্যাপারে সচেতন। যাচাই-বাছাইয়ের পর দেশের সব আসনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী নির্ধারিত হবে। আমি দেশের সমস্ত জনগণ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ করবো সুষ্ঠু ও অবাধ নিবাচন নিশ্চিত করার জন্য। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমার আহ্বান তারা যেন নিরেপেক্ষভাবে, স্বাধীনভাবে এবং ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠ রিটার্নিং অফিসার প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সব কতর্মকর্তার প্রতি আমাদের আহ্বান আপনারা দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। পোলিং এজন্টরা যাতে নির্ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করুন। আমি বিশ্বাস করি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অপরিহার্য অংশ। যদি জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি ১৯৭১ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন আমাদের দেশ ও জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ এ গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে।
আশা করি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল, সকল প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালনের ফলে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন পাব। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ঐক্যফ্রন্টসহ সব প্রার্থীদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণ ক্ষমতার মালিক। জনগণকে দায়িত্ব নেয়ার জন্য তাদের কাছে তথ্য যাওয়া দরকার। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ আপনাদের কাছে যে তথ্য আসবে সঙ্গে সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। তথ্য পেলেই জনগণ মালিকের ভূমিকা রাখতে পারবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশ সংবিধান অনুযায়ী শাসিত হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশ শাসনের ব্যাপারে আমরা জনগণকে সক্রিয়ভাবে চাই। শুধু একটা ভোট দিয়ে আপনাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। ভোট দেয়ার সময় যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদেরকে নির্বাচিত করুন। এটা খুব বড় একটা দায়িত্ব। কারণ মালিকরা যদি তাদের প্রতিনিধি ঠিকমতো নির্বাচিত না করেন তাহলে জাতি সুশাসন থেকে ও সাংবিধানিক শাসন থেকে বঞ্চিত হয়। এই বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে।
পরে ৩০ তারিখ নির্বাচন। সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়। তার জন্য মালিক হিসেবে জনসাধারণকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পত্রপত্রিকায় অনেকে আশঙ্কা করছেন নানাভাবে নির্বাচনকে বাধা দেয়া হতে পারে বলে। কিন্তু এই বাধাগুলো সরকার হোক আর যার পক্ষ থেকেই আসুক বাধাগুলোকে অতিক্রম করতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে আমাদের যারা গিয়েছেন। সবাই বলছেন দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। দেশের মানুষ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এই নিরপেক্ষ নির্বাচন দয়া-মায়ার ব্যাপার না। অনুগ্রহের ব্যাপার না। এটা সংবিধানের প্রতিশ্রুতি। আমাদের সংবিধানে আছে জনগণ ক্ষমতার মালিক। এই মালিকানা তারা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রয়োগ করবেন ও ভোগ করবেন। গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, ২ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ২৮ দিন আপনাদের পুরোপুরি সহযোগিতা চাচ্ছি। আপনারা শুধু নাগরিকদের অংশ না। আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রচার মাধ্যমে যেন জনগণকে তথ্য দেয়া যায়। জনগণ যেন সঠিকভাবে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে তার জন্য মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বেশি। এজন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাদের প্রয়োজন। আপনারা যেন জনগণকে সঠিক তথ্যগুলো দিতে থাকেন। তিনি বলেন, এখন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সকল ধরনের আইন-কানুনকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। নির্বাচন যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ না হতে পারে তার জন্য আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সেসব ব্যাপারে আপনারা দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। ধরিয়ে দেবেন। আইন মেনে সবাইকে চলতে হয়। কিন্তু কেউ আইন অমান্য করলে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব মিডিয়ার। সেটাকে ধরিয়ে দেয়া মিডিয়ার দায়িত্ব। যদি সঙ্গে সঙ্গে না ধরা হয় তাহলে একটা আইন অমান্য করার পর তারা মনে করে আইন না মেনে এভাবে চালানো যায়। তখন এটা গুরুতর আকার ধারণ করে।
ড. কামাল বলেন, এদেশের মানুষ অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা আছে। স্বাধীনতা আমরা পেলাম। কিন্তু কিভাবে? ভাষা আন্দোলন থেকে যদি শুরু করি। তাহলে দেখা যাবে- ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষ যখন দাঁড়ায় তখন তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
তিনি বলেন, ৭০-এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গণরায় আমরা পেয়েছিলাম। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলেই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। অনেকেই তখন বলেছে আমরা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালাম। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরোপেক্ষ নির্বাচন আজকেও সম্ভব। এটা সরকারের অনুগ্রহের ব্যাপার না। তিনি বলেন, অবাধ নিরোপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে তার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন আছে সেটা হলো সকলে যেন মুক্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এবং নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য ভূমিকা রাখতে পারে। তার জন্য অপরিহার্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ। সেটা আমরা বার বার বলে যাচ্ছি। লিখিত আকারেও বলেছি। এই সুষ্ঠু পরিবেশের পরিপন্থি হলো- পাইকারিভাবে গ্রেপ্তার করা। যারা নির্বাচন করছেন, তিনি প্রার্থী হন, ভোটার হন বা নাগরিক হন।
যে কোনো ভূমিকায় থাকেন না কেন। তাদের যদি গ্রেপ্তার করা হয়। তাহলে সুষ্ঠু পরিবেশ বলা যায় না। স্বাভাবিক বলা যায় না। ভোটের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করা অপরিহার্য। এটা আপনারা নিজেরাও বোঝেন। আমি বিশেষ করে সাংবাদিকদের বলব জনগণ ক্ষমতার মালিক। আর আপনারা মালিকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। আমি মনে করি এই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক দলের দাবি না এটা আপনাদের দাবি হোক। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর ৭০০ এর উপরে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন প্রার্থীও রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলেছিলেন তফসিলের পর কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। সংলাপের সময় প্রধানমন্ত্রীও একথা বলেছিলেন। আমরা চাই ভোটের মাঠে স্বাভাবিক পরিবেশ রাখার জন্য, সুষ্ঠু পরিবেশ রাখার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতিগুলো পালন করা হোক। যাদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে মুক্ত করা হোক। বিশেষ করে যারা প্রার্থী তাদের অবশ্যই মুক্ত করা হোক।
যদি ভবিষ্যতে আপনারা ক্ষমতায় যান তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন কোন প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। এটা নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা নির্বাচনে নিরপেক্ষতা চান না। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিলাম। তখন বিএনপি যে নির্বাচন করেছিল, সেটা বাদ দিয়ে আমাদের সঙ্গে বসে সংবিধান সংশোধন করেছিল। সংশোধনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করা হলো। তখন থেকে একটার পর একটা নির্বাচন হলো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসলো। ২০০৭ এর কথাও আপনাদের মনে আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য এলো। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান সম্মত না মর্মে আদালত একটি রায় দিয়েছেন। কিন্তু ওই রায়েও লেখা আছে- আরো দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। সেগুলোতে আমাদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া সংবিধানের একটা বিধান। এটা খেয়াল খুশির ব্যাপার না। আমরা ৮৬-এর নির্বাচন পর্যন্ত দেখেছিলাম একটার পর একটা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এই কারণে নিরপেক্ষ সরকারের প্রস্তাব আসে।
এরপর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট ছিলেন। এটা কোনো বিরোধের ব্যাপার না। এটা ব্যাখার ব্যাপার। আমি মনে করি আমরা যারা একসঙ্গে নির্বাচনে যাচ্ছি। তারা সবাই মনে করি জনগণ হলো ক্ষমতার মালিক। যা কিছু হবে জনগণের মতামত নিয়েই হবে। তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করা হবে। আমার বিশ্বাস নির্বাচন সুষ্ঠু হোক এটা একশ’ ভাগ মানুষই চায়। পাগল-ছাগল ছাড়া সবাই নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না এটা কোনো রহস্যের ব্যাপার না। আমার বয়স হলো ৮০ বছর। বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটে আমার সমবয়সী যারা ছিল তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। আমি আছি তাও না থাকার মতো। এখন কথা হলো- মানুষ রাজনীতি করে তো ৫৫ বছর পর্যন্ত।
আমাদের অনেকেই বয়স হলেও সরে যেতে চান না। আমি সে রকম না। আমি নির্বাচন করছি না বলে আমি নেই বিষয় এমন না। আমি নির্বাচন না করার মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র নেই। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র শব্দটা একটু কম ব্যবহার করা হোক। এটা দেখতে দেখতে এখন বিরক্ত লাগে। সব জায়গায় ষড়যন্ত্র শব্দ ব্যবহার করা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানকে সংশোধন করে যদি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে আরো বেশি পূরণ করা যায় তাহলে সেটা করা যাবে। সংবিধান তৈরি করা হয় ১৯৭২ সালে। প্রায় ৪৬ বছর হয়ে গেল। কোনো ঘাটতি থাকলে সেটার সংশোধনী এনে এই ঘাটতিটা পূরণ করা হবে। কিন্তু সংবিধানের মৌলিক যে বিষয় গণতন্ত্র। আমি মনে করি না এখানে কোনো দ্বিমত করার সুযোগ আছে।
জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই হুমকির মুখে পড়বে। ড. কামাল হোসেনের এমন লিখিত বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, জনগণ এটা হতে দেবে না। অবশ্যই হুমকির মুখে পড়তে পারে। তবে এটা আমরা হতে দেবো না। যেসব যোদ্ধারা আমার পাশে বসা আছে তারা সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে এটা রক্ষা করবে। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সঙ্ঘবদ্ধ থাকতে হবে। সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। মৌলিক আইন সংবিধান মেনে আমাদের কাজ করা দরকার। নির্বাচন কমিশন যদি নিজেই সংবিধান অমান্য করে তাহলে এটা গুরুতর একটা ব্যাপার। কারণ সংবিধানের ভিত্তিতে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আইনের শাসন মানে হলো কেউ যদি আইন অমান্য করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ধরিয়ে দেয়া দিতে হবে। আর কেউ যদি সংবিধান অমান্য করে সেটা তো আরো গুরুতর। আমি মনে করি ভোটারের ভোট প্রদানে কোনো রকম হুমকি এলে আমরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কেন রক্ষা করতে পারবো না। সরকারের সবসময় কিছু ক্ষমতা থাকে। মানুষকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা তাদের থাকে। বাংলাদেশের মানুষ কখনো সেই ধরনের দমন ও নিপীড়নের কাছে স্যারেন্ডার করেনি।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সময় প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নতুন বিধিমালায় এগুলো সংযোজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা আসলে একটা নৈতিকতার ব্যাপার। যেই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে। এগুলো সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক। এটার ব্যাপার আমরা দেখছি। যদি কোর্টে যেতে হয় তাহলে আমরা যেতেও পারি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য, মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য, সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলাম। ঐক্যফ্রন্টের সকল রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য যেসব নেতাকে গ্রেপ্তার করে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে তাদের মুক্ত করে আনার জন্য। অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এবার তফসিল ঘোষণার পরে এখনো বেআইনিভাবে গায়েবি মামলায় নেতাকর্মীদেরকে আটক করা হয়েছে। শ’ শ’ নেতাকর্মী প্রতিদিন আটক হচ্ছে। নির্বাচনে প্রার্থী যারা হয়েছেন, যারা এমপি ছিলেন আগে তাদেরকেও আটক করা হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোনোদিনই তৈরি হবে না। অবিলম্বে এই গ্রেপ্তার বন্ধ করা হোক। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেয়া হোক। তা নাহলে এই নির্বাচন কখনোই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আমরা বার বার বলেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপরও গ্রেপ্তার বন্ধ করা হচ্ছে না। আমরা আশা করবো ড. কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলনের পরে এই গ্রেপ্তার বন্ধ হবে। অন্যথায় এই পরিবেশ সুষ্ঠু করার জন্য আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ডাকসু’র সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।