ঢাকা:স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা মেয়ররা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) ও স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়ররা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিতে হবে।
২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত মেয়র ও চেয়ারম্যানের পদে থেকে কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে এ বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের লিখিত কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি, মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসির মতে, লিখিত নির্দেশ দেওয়া হলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ আদালতে গিয়ে মামলা করে নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে পারেন।
এই বিষয়ে একই দিন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগের নির্বাচনগুলোয় অনেকেই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের পদে থেকে নির্বাচন করেছেন এবং এ–সংক্রান্ত মামলায় একই বিষয়ে আদালত থেকে দুই ধরনের নির্দেশ পাওয়া গেছে। তবে কমিশন মনে করে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদ লাভজনক। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সরকারের লাভজনক পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না। এই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে।
কিন্তু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইন ইসির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না। পৌরসভা আইনের ১৯/২ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি মেয়রপদে থাকার অযোগ্য হবেন। ৩৩ ধারায় বলা আছে, কোনো মেয়র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মেয়রের পদ শূন্য ঘোষিত হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ আইনে বলা আছে, নির্বাচিত চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে হলে চেয়ারম্যান পদে থাকার যোগ্য হবেন না। যার অর্থ, ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পদে থেকে কেউ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁদের চেয়ারম্যান বা মেয়রের পদ ছেড়ে দিতে হবে।
কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইসির নির্দেশনা কার্যকর হলে ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়ররা পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।
তবে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি আদালতে গেলে ফল ভিন্ন রকম হতে পারে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন পৌর মেয়র ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ইসির নির্দেশ না মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হন। পরে এ–সংক্রান্ত মামলায় রায়ে আদালত সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে রায় দিলেও পৌর মেয়ররা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে রায় দেন।
এই রায়ের ওপর ভিত্তি করেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে চারজন পৌর মেয়র পদে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই চার সাংসদ হলে নোয়াখালী-৩ আসনে মামুনুর রশীদ, ফেনী-২ আসনে নিজাম উদ্দিন হাজারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও ভোলা-২ আসনের আলী আজম। তাঁরা যথাক্রমে চৌমুহনী, ফেনী, রোহনপুর ও দৌলতখান পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
যদিও এই চার সাংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও পৌর মেয়রের পদ আগলে রেখেছিলেন। এই বিষয়ে একই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘একই সঙ্গে সাংসদ ও পৌর মেয়র, চার আইনপ্রণেতার বেআইনি কাজ’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরদিন প্রজ্ঞাপন জারি করে চার পৌরসভার মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করেছিল।