রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে রাখাইনে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা

Slider সারাবিশ্ব


ঢাকা: বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা মুসলিমদের পরিকল্পিত প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে রাখাইনে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের হাতে নৃশংস নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে আসা এসব রোহিঙ্গাকে তারা ‘পলাতক শরণার্থী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এ খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে প্রায় একশত বৌদ্ধ ভিক্ষু রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে ওই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন। এ সময় তাদের হাতে ছিল লাল ব্যানার। তারা রোহিঙ্গা বিরোধী, প্রত্যাবর্তন বিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। রোববার অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষ দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য দায়বদ্ধ। তিনি এ সময় আগের মতোই রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বলেন, আমরা যদি বাঙালিদের গ্রহণ করি তাহলে আমরা বা আমাদের দেশ কোনো সুবিধা পাবে না।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা ছিল এখন থেকে প্রায় ১৫ দিন আগে। কিন্তু রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সেই প্রত্যাবর্তন শেষ মুহূর্তে থেমে যায়। এরপরই রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী এই বিক্ষোভ করলেন বৌদ্ধরা।

২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতন শুরু করে। গণধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ সহ নানা রকম নারকীয় কা-ে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা তাদের ভিটেমাটি ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। রোহিঙ্গারা বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নারী ও যুবতীদের ধর্ষণ করেছে। হত্যা করেছে তাদের আত্মীয় স্বজনকে। পুড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘরের ভিতর মানুষ রেখে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জীবন্ত হত্যা করা হয়েছে স্বজনদের। এমন নৃশংসতা থেকে বাঁচতে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। তাদেরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আটকে আছে প্রায় এক বছর ধরে। এ নিয়ে একের পর এক বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের মধ্যে। চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। মিয়ানমার সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে। অবশেষে এ বছর নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের দাবি দেশে ফিরে যাওয়ার আগে তাদেরকে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দিতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সম অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের জমিজমা, আদি বসতভিটা। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়নি। উল্টো তারা ফিরে গেলে রাখা হবে ট্রানজিট ক্যাম্পে, যা এক রকম জেলখানার মতো। বেড়া দিয়ে বেষ্টিত। এমন আশ্রয় শিবিরের ছবি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। রোহিঙ্গাদের দাবি, তারা বর্তমান অবস্থায় ফিরে গেলে তাদের ওপর শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করা হবে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সর্বশেষ যে বিক্ষোভ করলেন তা তারই বহিঃপ্রকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *