গাজীপুর: গাজীপুর জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটি আসনেই এখন নিয়াজ উদ্দিন আতঙ্ক। নিয়াজ উদ্দিন জাতীয় পার্টির নেতা হলেও তাকে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির তিন আসনের এমপি প্রার্থীরা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য এমনটিই জানান দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় নেতা। তাকে লিখিতভাবে গাজীপুর-২ আসনে মনোনয়ন দেয়ার কথা বলেছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকার কারণে গাজীপুর-২ আসনে তিনি মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। কারণ গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। সুতরাং এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া দুষ্কর। তাই নিয়াজ উদ্দিন এখন ভিন্ন স্টাইলে হাঁটছেন।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ গাজীপুরে একটি আসন শক্তভাবেই চেয়েছেন নিয়াজ উদ্দিনের জন্য। কিন্তু আওয়ামীলীগ এটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে। সূত্র বলছে, গাজীপুর-২ না হলে গাজীপুর-১ আসনে যদি আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দল তুঙ্গে থাকে, তবে নিয়াজ উদ্দিনকে গাজীপুর-১ আসনে দেয়া হতে পারে। কিন্তু গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী থাকায় সেখানেও সুবিধা করতে পারছেন না নিয়াজ উদ্দিন। আবার নিয়াজ উদ্দিনকে জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদের অভিযোগ এনে সচিব থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বাধ্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী, এমন অভিযোগ থাকায় নিয়াজ উদ্দিন গাজীপুর-১ আসন পেলে কৃতজ্ঞ থাকেন এরশাদ ও আওয়ামীলীগের প্রতি। তাই নিয়াজ উদ্দিন এখন চেষ্টা করছেন যেন তিনি গাজীপুর-১ আসনে থেকে মহাজোটের মনোনয়ন পান।
এদিকে জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করলে ও নিয়াজ উদ্দিন কোন আসন না পেলে মোড় পাল্টে যেতে পারে এমন আশংকাও আছে। ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্র বলছে, সাবেক সচিব নিয়াজ উদ্দিন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিলে তাকে গাজীপুর থেকে একটি আসনে প্রার্থী করা হবে এমন প্রস্তাবও রয়েছে। এমনটি হলে নিয়াজ উদ্দিন গাজীপুর-২ আসনও পেতে পারেন। অথবা ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিলে তিনি গাজীপুর-১ বা ৩ আসনেও নির্বাচন করতে পারেন। তবে ঐক্যফ্রন্টের শরীক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গাজীপুর-৩ আসন চায় বলেও খবর আছে। তাই নিয়াজ উদ্দিন ১ ও ২ আসনের দিকে ঝুঁকে আছেন এমন ধারণা বর্তমান।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন যেভাবে পাল্লাভারী করছেন সেই প্রক্রিয়ায় নিয়াজ উদ্দিন যেতে পারেন এমন সম্ভাবনাও আছে। আবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ব্যাক্তিগতভাবেই চান সাবেক সচিব নিয়াজ উদ্দিন তার পার্টিতে থাকুক।
এমতাবস্থায়, সাবেক সচিব নিয়াজ উদ্দিন গাজীপুরে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। জাতীয় পার্টি আলদাভাবে নির্বাচন করলে তিনি গাজীপুর-২ থেকে প্রার্থী এটা নিশ্চিত। আর জাতীয় পার্টি মাহজোটে নির্বাচন করলে তিনি গাজীপুর-১ পেতে চাচ্ছেন। আর জাতীয় পার্টি বা মহাজোটের হয়ে তিনি মনোনয়ন না পেলে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে গাজীপুর-১, ২ বা ৩ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। গাজীপুরের জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলছেন, কোন দল থেকে নির্বাচন করতে না পারলে স্বতন্ত্র হলেও নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন করবেন। এছাড়াও সূত্র জানায়, গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি আছেন যারা গোপনে গোপনে কাজ করছেন নিয়াজ উদ্দিনের পক্ষে।
সুতরাং নিয়াজ উদ্দিন এখন গাজীপুর-১, ২ ও গাজীপুর-৩ আসনে দুই বড় জোটের জন্যই আতঙ্ক বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।